দেশে টানা ৯ দিন পর করোনার মৃতের সংখ্যা নব্বইয়ের নিচে নামল। গতকাল দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে আরো ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একদিনে আরো ৩ হাজার ৬২৯ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ। এর মধ্য দিয়ে ৯ দিন পর দেশে মৃত্যুর সংখ্যা নব্বইয়ের নিচে হলো। আর দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজারের নিচে নামল ৪ দিন পর।
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে হাসপাতালে রোগীর যখন প্রচন্ড চাপ, সে সময় ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিন প্রথমবারের মতো দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৯০ ছাড়ায়। এর দুইদিনের মাথায় তা একশ’ ছাড়িয়ে যায়। ১৬ থেকে ১৯ এপ্রিল চারদিন দেশে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ছিল একশোর বেশি। ১৯ এপ্রিল রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। ১৪ থেকে ২২ এপ্রিল টানা ৯ দিন পর দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা নব্বইয়ের নিচে নামার খবর পাওয়া গেল।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার ৮টা সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ জনের মৃত্যু হওয়ায় দেশে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ৮৬৯ জনে পৌঁছাল। আর গত একদিনে আরো ৩ হাজার ৬২৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৭০৩ জন হলো। সরকারি হিসাবে আক্রান্তদের মধ্যে আরো ৫ হাজার ২২৫ জন গত একদিনে সেরে উঠেছেন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৬৭৪ জন।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ। তা ৭ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১৪ এপ্রিল। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। মাঝে দু’দিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজারের ঘরে থাকলেও ১৯ থেকে ২২ এপ্রিল প্রতি দিনই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজারের মধ্যে।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১৫ এপ্রিল তা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
বিশ্বে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ১৪ কোটি ৪৮ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩০ লাখ ৭৩ হাজারের বেশি মানুষের। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৩৭তম অবস্থানে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গতকাল সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৪৯টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটিপিসিআর ল্যাব ১২২টি, জিন এক্সপার্ট ৩৪টি, র্যাপিড অ্যান্টিজেন ১৯৩টি। এসব ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ২৬ হাজার ৪১৩টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৫ হাজার ৮৯৬টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৩ লাখ ৩ হাজার ৮টি। এতে আরো জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ৫৬ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৭ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৮৮ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন। এছাড়া রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর বিভাগে তিনজন করে ১২ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ৫৩ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৩৪ জন, হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে একজনকে। মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরে ঊর্ধ্বে ৬০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছয়জন, শ‚ন্য থেকে ১০ বছরের নিচে একজন রয়েছেন। এতে আরো জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ৬৩৪ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৪৬৯ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ১৭০ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ১ লাখ ৫ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৯ হাজার ১৬৫ জন।
এদিকে গতকাল সারাবিশ্বে ১৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন করোনা ভাইরাস। এ নিয়ে মোট প্রাণহানি ৩০ লাখ ৮৪ হাজার ছাড়াল। ২৪ ঘণ্টার হিসাবে প্রাণহানি আর শনাক্তের হার কিছুটা কমেছে ব্রাজিলে। লাতিন দেশটিতে বৃহস্পতিবারও মারা গেছেন ২ হাজারের ওপর। নতুনভাবে ৪৯ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে মিলল ভাইরাসটি। যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে ৮৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে; শনাক্ত সাড়ে ৬৬ হাজারের মতো সংক্রমণ। দিনে- ৭শ’র কাছাকাছি প্রাণহানি হয়েছে পোল্যান্ড। সাড়ে ৫শ’ মানুষ মারা গেছেন মেক্সিকো ও আর্জেন্টিনায়। আর করোনার ২য় ঢেউয়ের ধাক্কায় রীতিমতো কাঁপছে ভারত। দেশটিতে ভয়াবহভাবে বেড়েই চলেছে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দেশটির দৈনিক করোনা সংক্রমণ ছাড়িয়েছে ৩ লাখের ঘর। আগের দিনের তুলনায় গতকাল শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সেই সংখ্যা বেড়েছে ১৭ হাজারের বেশি। একইসঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন রেকর্ড ২ হাজার ২৬৩ জন।
এছাড়া চার থেকে সাড়ে ৪শ’র বেশি মৃত্যু দেখল রাশিয়া, ইউক্রেন, ইরান ও কলম্বিয়া। বিশ্বজুড়ে একদিনে আরো ৮ লাখ ৮৩ হাজার মানুষের দেহে মিলল ভাইরাসটি। মোট সংক্রমিত সাড়ে ১৪ কোটির ওপর।