শরীরে হোগলাপাতা দিয়ে তৈরি পোশাক, মুখে লাল মাস্ক। এক হাতে বাঁশের লাঠি, আরেক হাতে কাগজ। এই বেশে পিরোজপুর শহরে ঘুরে ঘুরে কাগজে লেখা করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক তথ্য প্রচারে নেমেছেন মো. ফরিদ (৩৮) নামের এক ইজিবাইকচালক। সরকারের নির্দেশনা মেনে নিজে ইজিবাইক চালাচ্ছেন না। অন্যকেও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে সচেতন হয়ে লকডাউন সফল করতে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছেন। তাঁর এই ব্যতিক্রমী প্রচারণা অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে দিয়েছেন। সেখানে সবাই তাঁর এ উদ্যোগের প্রশংসা করছেন।
ফরিদের বাড়ি পিরোজপুর পৌরসভার শিকারপুর মহল্লায়। গত ১৪ এপ্রিল দেশব্যাপী ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হওয়ার দিন সকাল থেকেই শুরু হয় তাঁর এই প্রচারণা। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সড়কে ঘুরে ঘুরে প্রচারণার মাধ্যমে মানুষক সচেতন করার কাজ করছেন। কখনো কখনো প্রচারণা চালাতে ব্যবহার করছেন হ্যান্ড মাইকও। লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলাচল করা লোকজন ও যাত্রীদের সচেতন হতে পরামর্শ দেন।
পিরোজপুর শহরের গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাব সড়কের ব্যবসায়ী সোহাগ খান বলেন, ‘সরকারি ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের ব্যাপারে নানা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে মো. ফরিদের মতো একজন শ্রমজীবী মানুষের ব্যতিক্রমধর্মী প্রচার আমাদের ভালো লেগেছে। আমরা তাঁর এই কাজকে সাধুবাদ জানাই। মানুষও তাঁর প্রচারণা উপভোগ করছে। এই প্রচারণা দেখে কেউ কেউ সচেতন হচ্ছে।
ফরিদ বলেন, করোনায় প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু লোকজন খুব একটা সচেতন হচ্ছে না। শহরে লোকজন বের হচ্ছে। কেউ কেউ ঘোরাফেরা করছে মাস্ক ছাড়া। এই পরিস্থিতে তিনি ভাবলেন, তাঁরও কিছু করা উচিত। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এই ধরনের প্রচারণা শুরুর কারণ জানতে চাইলে এই ইজিবাইকচালক বলেন, ‘আমার মতো একজন সাধারণ মানুষ করোনার সংক্রমণ রোধে প্রচারণা চালালে মানুষ সেভাবে গ্রহণ না-ও করতে পারে। তাই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে একটু ব্যতিক্রমী প্রচারণা শুরু করি। মানুষ আকর্ষণীয় এ প্রচারণা থেকে যদি একটু সচেতন হয়, তবে আমার প্রচারণা সার্থক হবে।
লকডাউনে নিজের জীবিকার বিষয়ে ফরিদ বলেন, ‘সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও নিয়ম মেনে চলছি। কিছু জমানো টাকায় সংসার চালাচ্ছি। পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রশাসনের প্রচারণার পাশাপাশি সবার দায়িত্ব রয়েছে মানুষ ও পরিবারের সদস্যদের সচেতন করার। মো. ফরিদ নিজ উদ্যোগে মানুষকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মানুষকে সচেতন করার জন্য যে প্রচারণা চালাচ্ছেন তা প্রশংসনীয়।