প্রতিটি মানুষই- সে যেমনই হোক পেতে চায় কাছের মানুষের স্পর্শ। কালো- সাদা, ধনী -গরীব , প্রতিবন্ধী- অপ্রতিবন্ধী সবাই চায় ভালোবাসার স্পর্শ । স্পর্শ অনুভব করার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এক অসাধারণ ক্ষমতা। ভালোবাসার, স্নেহময় স্পর্শ অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারে, মানুষকে নতুন করে বেঁচে থাকার সাহস যোগায়। যে দিন এই পৃথিবী থেকে স্নেহময় স্পর্শ উঠে যাবে সেদিনই হয়তবা মহাপ্রলয় ঘটবে।
এ স্পর্শ একজন মানুষ জীবনের প্রতি মুহূর্তে অনুভব করে। তবে যৌবনে এ স্পর্শের পরশ পেতে মানুষ মরিয়া হয়ে যায়। এটাই সহজাত প্রবৃত্তি। যৌবনের ধর্মই এটা। এ প্রবৃত্তির কারণেই মানুষ পরিবার গঠন করে। ফলে মানুষের স্বাভাবিক বংশবৃদ্ধি ঘটছে। মানব জাতি বেঁচে আছে পৃথিবীতে।
এ স্বাভাবিক বংশবৃদ্ধিতে অনেকেই পরিবার গঠনের স্বাভাবিক, ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ধরনের একটি জনগোষ্ঠী হচ্ছে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর বিয়ে ও পরিবার গঠনে আইনগত বিধি নিষেধ না থাকলেও সমাজের মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী কিছু মানুষকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে ।
অসহায় প্রতিবন্ধীরা আল্লাহ পাকের সৃষ্টি, তেমনি আল্লাহপাকের সৃষ্টি সকল সুস্থ মানুষ প্রতিবন্ধীদের প্রতি অন্যায়, অত্যাচার , নির্যাতন করেই যাচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সুরা – আল – আবাসা: আয়াত নং :১,২,৩, ৪, ৫,৭, ৮,৯, নাজিল হয়। যে মানুষ অসহায় প্রতিবন্ধীকে সারা জীবন সেবা করে যাবেন সে জান্নাতী হবেন বলে আশা করা যায়, আর যে মানুষ অসহায় প্রতিবন্ধীকে সারা জীবন ক্ষতি করে, ব্যাভীচার করে, অবিচার করে, অন্যায় ভাবে তাদের সম্পদ লুট করে, বাড়ী – ঘর দখল করবে সেই জাহান্নামী। সূরা নূর -আয়াত নংঃ ৫৯,৬০, ৬১,৬২, ৬৩,৬৪, নাজিল হয় প্রতিবন্ধীদের জন্যই ।
যদি আমাদের সমাজে কোন মানুষ অন্যায়ভাবে প্রতিবন্ধীদের প্রতি নির্যাতন ও অত্যাচার করে এবং তাদের ঘর বাড়ী, জমি দখল ও অন্যায় অবিচার করে থাকে তাদেরকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নিকট সোর্পদ করুন। এ প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় দেশে আইন রয়েছে।
(১) কোন ব্যক্তি প্রতিবন্ধিতার কারণে কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির আইনের আশ্রয় লাভে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা সৃষ্টির চেষ্টা করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হইবে এবং তিনি উক্ত অপরাধের জন্য অনধিক ৩ (তিন) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(২) কোন ব্যক্তি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্য সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতার কারণে কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রাপ্য হিস্যা হইতে বঞ্চিত করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হইবে এবং তিনি উক্ত অপরাধের জন্য অনধিক ৩ (তিন) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৩) কোন ব্যক্তি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কোন সম্পদ আত্মসাৎ করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হইবে এবং তিনি উক্ত অপরাধের জন্য অনধিক ৩ (তিন) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৪) কোন ব্যক্তি পাঠ্যপুস্তকসহ যে কোন প্রকাশনা এবং গণমাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে নেতিবাচক, ভ্রান্ত ও ক্ষতিকর ধারণা প্রদান বা নেতিবাচক শব্দের ব্যবহার বা ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যঙ্গ করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হইবে এবং তিনি উক্ত অপরাধের জন্য অনধিক ৩ (তিন) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৬) কোন ব্যক্তি জালিয়াতির মাধ্যমে পরিচয়পত্র তৈরী করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হইবে এবং তিনি উক্ত অপরাধের জন্য অনধিক ৭ (সাত) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
প্রতিবন্ধী সন্তান আপনার আমার জীবনের একটি অংশ । আপনার পরিবারেও হতে পারে প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্ম। তাই আসুন আমাদের প্রতিবন্ধী সন্তান, ভাই বোন ও আত্বীয় স্বজনকে অবজ্ঞা না করে তাদের পাশে দাঁড়াই। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য এ কথা মাথায় রেখে সকলে প্রতিবন্ধীদের পাশে দাড়িয়ে তাদেরকে বাচঁতে ও সম্পদে পরিণত করতে সহযোগিতা করি।
লেখক:
রুবায়েত হোসেন
প্রিন্সিপাল-
পরশ প্রতিবন্ধী স্কুল