মহামারি আকার ধারণ করা করোনায় দেশে হু হু করে বাড়ছে মৃত্যু ও শনাক্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৫৯ জন। যা এ যাবতকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ১০৫ জনে। এছাড়া দেশের ইতিহাসে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৪৬৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এত বেশিসংখ্যক রোগী আর শনাক্ত হয়নি। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৭৬৪ জনে।
বুধবার (৩১ মার্চ) করোনায় মারা যায় আরও ৫২ জন। এছাড়া ৫ হাজার ৩৫৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এছাড়া আগের দিন মঙ্গলবারও (৩০ মার্চ) করোনায় আক্রান্ত ও শনাক্ত ভয়ঙ্কর। এদিন আরও ৪৫ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী মারা যায় এবং শনাক্ত হয় ৫ হাজার ৪২ জন। গত কয়েকদিনের ধারাবাহিক শনাক্ত ও মৃত্যু পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় দেশের করোনা আবারও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে।
এমন এক অবস্থায় ঢাকার হাসপাতালগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ফাঁকা নেই কোনো আইসিইউ। প্রবল সংকটের মধ্যে সাধারণ শয্যা পেতেও হিমশিম খাচ্ছেন রোগীরা। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় বহু রোগীকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে নিয়মিত।
এছাড়াও দেখা গেছে, রাজধানীর কোভিড হাসপাতালগুলোতে করোনা টেস্ট করাতে আসা রোগীদের দীর্ঘ লাইন। নগরীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে দেখা যায়, সিটের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ রোগী বর্তমানে ভর্তি রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই সক্ষমতার চেয়ে তাদের অনেক বেশি পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। কুর্মিটোলা হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে আসা মানুষের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই করোনা পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকি গত বছর যখন করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল, এখন তার চেয়েও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
কুর্মিটোলা হাসাপাতালে এক কর্মচারী জানান, গত বছরের চেয়েও এবার রোগীর চাপ বেশি। রোগীদের জটিলতা ভিন্ন। ১০০ জনের মধ্যে ৪০ জনই পজিটিভ হচ্ছেন। ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দুই সপ্তাহের জন্য ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা করেছে সরকার। সকল ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) সীমিত, উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সকল ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ, বিয়ে/জন্মদিনসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
এছাড়াও মসজিদসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করা, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী বহন না করা, যান চলাচল সীমিত করা, বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা, সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করা সহ ১৮ নির্দেশনা জারি করে সরকার।
সংক্রমণের পরিস্থিতির যদি আরও অবনতি হয়, তাহলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এই পরিকল্পনাও আগে থেকে করে রাখা জরুরি। সংক্রমণ যদি দ্রুত বাড়ে, সেক্ষেত্রে আরেক দফা লকডাউনে যাবে কিনা, এই চিন্তাও আগেভাগে করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া করোনার বর্তমান অবস্থা আগামী কয়েকদিন এভাবে চলতে থাকলে এ মাসেই সরকার লকডাউনে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে লকডাউন করা দরকার কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সময়নিউজকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, লকডাউনই সব সমস্যার সমাধান নয়। নিজেদের ভিতরে সচেতনতা তৈরি করলেই লকডাউনের কাজ হবে। লকডাউন করলেন, কিন্তু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানল না তাতে কোনো লাভ হবে না।
এ জাতীয় আরো খবর..