করোনাকালীর ছুটি থাকায় অন্তর রাজধানীর সূত্রাপুরের ফরাশগঞ্জে তার পরিবারের কাছে থাকতো। গাজীপুরের জাঝর রাহিমা বিশ্বাস একাডেমি অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল অন্তর (১৭)। শব-ই-বরাতের দিন ফরাশগঞ্জ ঘাটে অন্তর তার ৮/১০ জন বন্ধু বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। আড্ডার এক সময় অন্তর ও সাজুসহ কয়েকজন ধূমপান করছিলো।
এ সময় তাদের পাশে বসে বসেছিলো কিশোর গ্যাং গ্রুপ ফেরদৌস বাহিনীর ৬/৭ জন। তাদের সামনে ধূমপান করার জেরে ক্ষিপ্ত হয় তারা এক পর্যায়ে তর্কাতর্কি ও শুরু হয় মারামারি। এসময় ফেরদৌস তার সঙ্গে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে সাজুর পিঠে ও অন্তরের পেটে ছুরিকাঘাত করলে কিশোর অন্তর মারা যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পালিয়ে যায় ফেরদৌস বাহিনীর সদস্যরা।
সোমবার (২৯ মার্চ) রাতে সূত্রাপুরের ফরাশগঞ্জ ঘাট এলাকায় মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয়রা অন্তর ও তার বন্ধু সাজুকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতলে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অন্তরকে মৃত ঘোষণা করে। এদিকে নিহত অন্তরের বন্ধু সাজু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ঘটনার পর সূত্রাপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকা তিন কিশোরকে গ্রেফতার করেছে। তবে আরও তিন কিশোর এখনও পলাতক রয়েছে। গ্রেফতার হওয়া কিশোররা হলো- বাহিনীর প্রধান ফেরদৌস (১৩), সাজ্জাদ (১৩) ও প্রান্ত (১৪)।
পুলিশ জানায়, নিহত কিশোর অন্তরের বাবা এস এম শাহাদাত হোসেন বাদি হয়ে সূত্রাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার এজাহারে ফেরদৌস (১৩), প্রান্ত (১৪), সাজ্জাদ (১৩), আল-আমিন (১৪), সাব্বির (১৫) সহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করা হয় মামলায়।
সূত্রাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) স্নেহাশিষ রায় বলেন, ‘সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করেই দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর ফেরদৌস, প্রান্ত, সাজ্জাদসহ ছয়জন মিলে অন্তরের বন্ধু সাজুকে মারধর শুরু করে। এসময় অন্তর সাজুকে বাঁচাতে যায়। ঘটনাস্থলে ফেরদৌসের সঙ্গে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে প্রথমে সাজুর পিঠে এবং পরে অন্তরের পেটে আঘাত করে ফেরদৌস। এই ঘটনায় অন্তর মারা যায়। তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফেরদৌস, সাজ্জাদ ও প্রান্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তাদের সঙ্গে থাকা আরও তিন কিশোর পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিহতের বন্ধু সারোয়ার হোসেন জানায় ওই গ্রুপের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব বা ঝগড়া ছিল না। খুব বেশি তাদের সঙ্গে কথাও হতো না। শব-ই-বরাতে রাত ৯টার দিকে তারা ৮/১০ জন বন্ধু মিলে ফরাজগঞ্জ ঘাটে আড্ডা দিচ্ছিল। সেখানে স্থানীয় ফেরদৌস, আল আমিন, সাব্বির প্রান্তসহ ৬/৭ জন মিলে সাজুকে মারধর শুরু করে। অন্তর ফেরাতে গেলে এক পর্যায়ে তারা অনন্ত ও সাজুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে তাদের দুইজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক অন্তরকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত অন্তরের ভাই আফসার বলেন আমার ভাইতো কোনো মারামারি বা কোনো গ্রুপের সঙ্গে ছিল না। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।