সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ৬৫টি পৃথক মামলার একসঙ্গে দেওয়া রায়ে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন। আদেশ ঘোষণার পর স্বামী স্ত্রীকে আদালত থেকে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায়। রায় ঘোষণার পর আদালতের পক্ষ থেকে ৫৪ দম্পতিকে ফুল দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, যৌতুকসহ নানা কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ৬৫ জন নারী সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে পৃথকভাবে আদালতে মামলা করেছিলেন। দীর্ঘদিন এসব মামলার বিচারকাজ চলছিল। নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীরা তাদের ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে অনিশ্চিত এক জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অনিশ্চিত জীবন থেকে ৫৪ স্ত্রীকে স্বামীর এবং সন্তানদের তাদের বাবার পারিবারিক বলয়ে আবদ্ধ করে ব্যতিক্রমী আপসের রায় দিলেন বিচারক। বিচারক উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে তাদের সন্তানদের এবং তাদের মঙ্গলের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধন এঁটে ৫৪টি দম্পতিকে পারিবারিক পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করে দিলেন।
কিন্তু ১১টি পরিবারকে একত্রিত করতে সক্ষম না হওয়ায় এবং নির্যাতিত স্ত্রী ও তাদের সাক্ষীরা স্বামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ায় এবং স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১১ স্বামীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত।
আপসে নিষ্পত্তিকৃত মামলার বাদী-বিবাদী পক্ষের স্বজনদের দাবি, সংসার থেকে বিতাড়িত ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে ওই নারীদের জীবন ছিল চরম দুর্দশাগ্রস্ত। এসব দুঃখ-বেদনা আর দীর্ঘশ্বাসে আদালত প্রাঙ্গণ ভারী থাকত। শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে এই রায় ৫৪টি পরিবারকে বিশৃঙ্খলার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে দিল। কারণ এসব মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তি না হলে ছোট ছোট শিশুরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অযত্ন অবহেলায় বেড়ে ওঠে ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিপতিত হত। এই রায় অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। আসামি পক্ষের আইনজীবী ওবায়দুর চৌধুরী বলেন, আদালতের রায়ে অনেক পরিবার সংসার জীবন ফিরে পেয়েছেন। অনেক বছর ধরে মামলা পরিচালনা করে পরিবারগুলো নিঃস্ব হওয়ার পথ থেকে আদালত তাদের রক্ষা করেছেন।
জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আইনুল ইসলাম বাবলু, আদালতের রায়ে ৫৪ জন দম্পতি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। পরিবারগুলো ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এভাবে বিচারকার্য পরিচালিত হলে মামলাজট কমবে। সন্তানরা পিতামাতার স্নেহে পরিবারে বেড়ে উঠবে।
সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, আদালত পৃথক ৬৫টি নারী-শিশু নির্যাতন দমন মামলায় রায় দিয়েছেন। ১১টি মামলায় ১১ জন স্বামীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। তবে ৫৪টি মামলায় স্বামী-স্ত্রীকে আপসের মাধ্যমে নিস্পত্তি করে দিয়েছেন। এর আগেও তিনি যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। এভাবে যদি বিচারকার্য চলে এবং মামলার নিস্পত্তি হয় তাহলে বিচার ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এবং বিচারপ্রার্থী জনগণ তাদের সুবিচার পাবে। আদালত রায় ঘোষণা শেষে দম্পতিদের হাতে ফুলের স্টিক ও শিশুদের হাতে চকলেট তুলে দেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ নভেম্বর একই আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন একদিনে পৃথক ৪৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলায় ৪৭টি পরিবারকে আপসের মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন।