ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত পুলিশ গঠন, জনগণের সাথে অপেশাদার আচরণ বন্ধ করা, বিট পুলিশিং এবং পুলিশের কল্যাণ ইত্যাদি নিয়ে সকল পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সাথে ধারাবাহিক মতবিনিময় করছেন।
মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে রোববার (২৭ ডিসেম্বর,২০২০) দুপুরে রাজশাহী জেলা পুলিশ লাইন্সে রাজশাহী রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটন (আরএমপি) এবং অন্যান্য ইউনিটের প্রায় তিন হাজার পুলিশ অফিসার ও ফোর্সের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইজিপি।
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আব্দুল বাতেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আরএমপি কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক। এছাড়াও রাজশাহী রেঞ্জ এবং আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, রাজশাহী রেঞ্জাধীন সকল জেলার পুলিশ সুপারগণ উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত ১০ বছরে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ পুলিশের অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। পুলিশের আধুনিকায়নের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। জনগণকে উন্নততর সেবা প্রদান করতে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন আরামদায়ক করার জন্য আমরা আধুনিক অপারেশনাল গিয়ার চালু করেছি। লং ব্যারেলের পরিবর্তে শর্ট ব্যারেলের অস্ত্র চালু করা হয়েছে। এ সবের মূল লক্ষ্য হলো, মানুষকে উন্নতর সেবা প্রদান।
পুলিশ প্রধান বলেন, একজন পুলিশ সুপার হতে পারেন একজন ‘চেঞ্জ মেকার’, প্রত্যেক পুলিশ সদস্য হতে পারেন এক একজন ‘চেঞ্জ এজেন্ট’। জাতিগঠনমূলক কাজে পুলিশ সদস্যদের অমিত সুযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনাদেরকে দেশের জন্য, সমাজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। আমরা ভাল কাজে ‘বেস্ট অব দি বেস্ট’ হতে চাই।” তিনি বলেন, “পুলিশের চাকরি করতে হবে ভালবেসে, চাকরিতে ‘প্রাইড’ নিয়ে আসতে হবে, যাতে আমাদের সন্তানরা গর্বভরে বলতে পারে আমার বাবা পুলিশ ছিলেন, আমার মা পুলিশ ছিলেন। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘জনগণের পুলিশ’ হতে চাই।”
আইজিপি বলেন, মানুষ বিপদে পড়ে পুলিশের কাছে আসে। উপস্থিত পুলিশ সদস্যদেরকে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার লাইসেন্স কে দিয়েছে? নিজেদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। মানুষকে ভালবাসতে হবে, তাদের সাথে ভাল আচরণ করতে হবে। মানুষকে ভালবাসলে তাঁদেরও ভালবাসা পাওয়া যায়। করোনাকালে আমরা এর প্রমাণও দেখেছি।
ড. বেনজীর আহমেদ দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে উচ্চারণ করেন, আমরা দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ গড়ে তুলতে চাই। দুর্নীতি করলে পুলিশে থাকা যাবে না। দুর্নীতি করে কেউ বড়লোক হতে চাইলে তার জন্য পুলিশের চাকরি নয়। মাদকের বিরুদ্ধে শূণ্য সহিঞ্চুতার কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, মাদকমুক্ত পুলিশ গড়তে সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যদের জন্য ডোপ টেস্ট চালু করা হয়েছে। পুলিশকে মাদকমুক্ত রাখতে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বিট পুলিশিংয়ের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে আমরা দেশের জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে চাই।
তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের জন্য প্রচলিত কল্যাণ ব্যবস্থার বাইরে ন্যায়সঙ্গত ও ন্যায্যভাবে কল্যাণের ব্যবস্থা করা হবে।
সভায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ অফিসার ও সদস্যগণ আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে আইজিপির দিকনির্দেশনা কামনা করেন। তাদের উত্থাপিত বিষয়গুলো সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন আইজিপি।এর আগে সকালে আইজিপি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অপারেশন কন্ট্রোল এন্ড মনিটরিং সেন্টার, কিশোর গ্যাং ডিজিটাল ডাটাবেজ এবং ‘হ্যালো আরএমপি’ অ্যাপ উদ্বোধন করেন।
আইজিপি দুই ঘন্টারও বেশী সময় ধরে দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য প্রদান করেন। আইজিপির উপস্থিতি রাজশাহী রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটনসহ রাজশাহী অঞ্চলে কর্মরত পুলিশ অফিসার ও ফোর্সকে ভীষণভাবে উজ্জীবিত করেছে, যা তাদেরকে নতুন করে জনসেবায় উদ্বুদ্ধ করবে।