ভাস্কর্য ইস্যুর শরীয়তসম্মত সমাধান চান দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম। উলামায়ে কেরামকে শত্রু বা প্রতিপক্ষ মনে করার কোনো কারণ নেই। উলামায়ে কেরামের মুখে কুরআন-সুন্নাহর বাণী শাসক ও দায়িত্বশীলদের যথাসম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করা কর্তব্য। মানবমূর্তি ও ভাস্কর্য যে কোনো উদ্দেশ্যে তৈরি ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। অনাকাঙ্খিত কোনো পরিস্থিতি সরকার জনগণ কিংবা আলেম উলামা কারো জন্যই সুখকর নয়।
গতকাল শনিবার সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়িস্থ জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া মাদরাসায় চলমান অস্থিরতা এবং জাতীয় সঙ্কট বিষয়ে আলেম-উলামাদের করণীয় শীর্ষক বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এর সভাপতি ও আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান প্রিন্সিপাল আল্লামা মাহমূদুল হাসান এসব কথা বলেন।
আল্লামা মাহমূদুল হাসান বলেন, যে কোনো ভুল বুঝাবুঝি বা বিরোধ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল সকলকে ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিতে হবে। দ্ব›দ্ব সংঘাত ইসলাম জনগণ ও রাষ্ট্র সকলের জন্যই ক্ষতিকর। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ধৈর্য সহনশীলতা ও উন্নত আখলাকের মাধ্যমে সব ধরনের পরিবেশ পরিস্থিতিতেই দ্বীনের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, দ্বীনের ব্যাপারে গোটা আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। আসুন আমরা অতীতের সকল প্রকার গুনাহ থেকে মহান আল্লাহ’র নিকট মাফ চাই। আল্লাহপাক বর্তমান সরকারের দিলকে ইসলামের দিলে পরিণত করে দিন আমীন!
বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক ও মুফতি নেয়ামত উল্লাহ আল ফরিদীর যৌথ পরিচালনায় উলামা বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে পাঁচ দফা প্রস্তাব গৃহিত হয়। আল্লামা মাহমূদুল হাসানের নেতৃত্বে ভাস্কর্য সর্ম্পকে শরীয়তের নির্দেশনার একটি চিঠি এবং একটি প্রতিনিধি দলকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। গৃহিত প্রস্তাবগুলো হচ্ছে, ভাস্কর্য তৈরি করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ভাস্কর্যের নির্মাণ না করে শতকরা ৯২ ভাগ মানুষের বিশ্বাস ও চেতনার আলোকে কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কোনো উত্তম বিকল্প সন্ধান করাই যুক্তিযুক্ত, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে উস্কানিমূলক কর্মকান্ড বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নবী (সা.) এর অবমাননা, বিষোদগার, ব্যঙ্গত্মক কার্টুনের প্রকাশের সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, দ্বীনি আন্দোলনে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার হয়রানি বন্ধ, দোলাইরপাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পুন:নির্মিত মসজিদ নামাজের জন্য অবিলম্বে উন্মুক্ত করতে হবে, শব্দদূষনের অজুহাতে ওয়াজ-মাহফিলে লাউড স্পিকার ব্যবহারে বিশেষ নির্দশনা অনভিপ্রেত। জনগণের কল্যাণের পথে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে সকল দ্বীনী মাহফিল যথানিয়মে অনুষ্ঠানের অবাদ সুযোগ প্রদান করতে হবে, যে সকল বিষয় শরীয়তে নিষিদ্ধ ও হারাম, সে সব বিষয়ে কুরআন সুন্নাহর আলোক সঠিক বক্তব্য তুলে ধরা আলেমদের দায়িত্ব। অথচ এক শ্রেণির মানুষ আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও দায়িত্বহীন আচরণ করছে। এসবের খোঁজখবর রাখা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। উস্কানিমূলক বক্তব্য, অবমাননাকর বক্তব্য উগ্র শ্লোগান সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে। ইসলাম, দ্বীন ও বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র ও অনাকাঙ্খিত হস্তক্ষেপ রোধ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।
বৈঠকে শীর্ষ উলামায়ে কেরামের মধ্যে আরো যারা বক্তব্য রাখেন তারা হচ্ছেন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মধুপুর পীর সাহেব মাওলানা আব্দুল হামিদ, খিলগাও মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদী, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুল হক খান নদভী, ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা রুহুল আমিন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি (একাংশ) মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম, মাওলানা নাজমুল হাসান, গাজীপুর দেওনা মাদরাসার মুহতামিম প্রিন্সিপাল মাওলানা মিজানুর রহমান, সিলেটের মাওলানা মোসলেহ উদ্দিন রাজু, বাহাদুরপুর পীর সাহেব আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান, মাওলানা জসিম উদ্দিন (হাটহাজারী), বি-বাড়িয়ার মাওলানা সাজেদুর রহমান, মুফতী জাফর আহমদ (পীর ঢালকানগর), মুফতি আরশাদ রাহমানী (বসুন্ধরা), মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মুফতি মনসুরুল হক, বরুনার পীর সাহেব মাওলানা আব্দুর রশিদ, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা মামুনুল হক, ইমাম মুসল্লি ঐক্য পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুরশিদুল আলম, পটিয়া মাদরাসার মাওলানা আবু তাহের নদভী, কিশোরগঞ্জের মাওলানা শাব্বির আহমদ রশিদ, বাংলাদেশ কুরআন সুন্না বোর্ডের চেয়ারম্যান মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী, ইসলামী ঐক্যজোটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, জাতীয় ইমাম সমাজের মহাসচিব মুফতি মিনহাজ উদ্দিন, মুফতি গোলাম রহমান, মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী, মাওলানা মহিবুল হক (সিলেট), মুফতি মোহাম্মদ আলী, ময়মনসিংহের মাওলানা মুফতি আহমাদ আলী, মাওলানা আকরাম হোসেন, মাওলানা মুফতি ফয়সাল হাবিব, মাওলানা আলীবরদি চন্ডিপুর, মাওলানা মুফতি মাসুদ আহমদ, মাওলানা শওকত হোসেন সরকার, মাওলানা মোবারক উল্লাহ ও মাওলানা মাহবুবুর রহমান।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী কুয়াকাটা, মাওলানা ফজলুর রহমান গাজীপুরী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মুফতি জুনাইদ গুলজার,মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন,মাওলানা বেলায়েত হোসেন আল-ফিরোজী, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা হারুন উর রশিদ, মুফতি মো. রুহুল আমিন, মুফতি শফিক সাদী, মাওলানা আনোয়ার হামিদী, মুফতি মুজিবুর রহমান (নরসিংদী), মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক, মাওলানা আবুল খায়ের বিক্রমপুরী ও মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ আজহারী।