ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, পুলিশ যেন জবাবদিহিমূলক বাহিনী হয়, সেজন্য আমাদের যতটুকু ভূমিকা রাখার প্রয়োজন, ততটুকু ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছি। পুলিশের যারা দুষ্কর্ম করছে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
শনিবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে ২০২০’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, সর্বত্র যেন কমিউনিটি পুলিশিং ছড়িয়ে পড়ে সে উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘মুজিববর্ষের মূলমন্ত্র কমিউনিটি পুলিশিং সর্বত্র’। অপরাধ প্রতিরোধ বা তথ্য উদঘাটনে পুলিশের ক্ষমতা মুখ্য বিষয় না, মুখ্য বিষয়টা হলো যে সমাজের জন্য, যে মানুষের জন্য আমি কাজ করছি, তারা যদি আমার সাথে না থাকে তাহলে এই পুলিশিং কখনোই মানুষের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে না। পুলিশের সাথে সম্পর্ক তৈরির জায়গা হচ্ছে এই কমিউনিটি পুলিশিং।
করোনাকালে পুলিশের প্রশংসনীয় ভূমিকা তুলে ধরে শফিকুল ইসলাম বলেন, আপনারা দেখেছেন করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে বাংলাদেশে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যেখানে সন্তান মাকে ফেলে রেখে গেছে, সেখানে পুলিশ কাউকে ফেলে রেখে যায়নি। আমরা ফেলে রাখা মায়ের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি, যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদেরও কবরস্থ করার ব্যবস্থা করেছি। ঢাকা শহরের কোথাও করোনায় আক্রান্ত মানুষ কবরস্থ করতে দিচ্ছিলেন না স্থানীয়রা। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয়দের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, কবর থেকে এই জীবাণু মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে না।
যে কোনো প্রয়োজনে আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। ঢাকা শহরে আমরা দুই মাস প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষকে একবেলা করে রান্না করা খাবার খাইয়েছি। প্রচুর মানুষকে হাজার হাজার প্যাকেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী দিয়েছি। খাবারের প্রয়োজনে যিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন তার বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছি। আমরা চাই আপনারা যেন ভয় না পান। স্বাধীন দেশের নাগরিক আপনি, আপনাদের সেবা করবো বলে, আপনাদের অসুবিধায় পাশে দাঁড়াবো বলে এই পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছি। এখন আপনি যদি আমাকে ভয় পান, ঘৃণা করেন, আপনার অন্তর থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দেন, তাহলে আপনি বিপদে পড়লে কার কাছে যাবেন?ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশ যেন জবাবদিহিমূলক বাহিনী হয়, সেটার জন্য আমাদের যার যেখানে থেকে যতটুকু ভূমিকা রাখার প্রয়োজন, ততটুকু ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছি। পুলিশের যারা দুষ্কর্ম করছে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এই দেশটা এমনি এমনি স্বাধীন হয়নি। অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত দেশটি কতিপয় দুর্বৃত্তের কাছে ছেড়ে দেবো, এমন প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণ করতে পারবো। পুলিশের সমস্ত ভালো কাজে আমরা আপনাদের পাশে চাই এবং পুলিশের খারাপ কাজে সবার আগে প্রতিবাদী কণ্ঠটা আপনারই হোক, এমন প্রত্যাশা করি।
ঢাবি উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান বলেন, জীবনের ও সমাজের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে পুলিশের উপস্থিতি নেই। পুলিশের প্রয়োজন সর্বত্র আছে। অগ্রণী হিসেবে তারা দায়িত্ব পালন করছে। শান্তি, কঠিন সংকটে, দুর্ধর্ষ দুর্ঘটনার সময় পুলিশ সামনের সারিতে থেকে আমাদের জন্য কাজ করছে। সে কারণে তাদের উৎসাহ দেয়া ও ভালো কাজকে সামনে আনা আমাদের মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব।
এর আগে কমিউনিটি পুলিশিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় রমনা বিভাগ হতে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্য অ্যাডভোকেট নাজমুল হাসান ও মতিঝিল বিভাগ হতে মো. মারুফ আহমেদ মোনছের এবং কমিউনিটি পুলিশিংয়ে শ্রেষ্ঠ পুলিশ অফিসার হিসেবে রামপুরার থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন্স) ইউসুফ হাসান ও নিউমার্কেট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহেব আলীকে পুরস্কৃত করা হয়।