যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ফিলিস্তিনি-আমেরিকান এক শিশুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় ছুরিকাঘাতে শিশুর মাকে হত্যার চেষ্টা চালায় হামলাকারী ইসরাইলি নাগরিক। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে চলমান যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় এই হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া এই হামলাকে মুসলিমবিরোধী হামলা বলেও অভিহিত করেছে মার্কিন পুলিশ। সোমবার (১৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছয় বছরের এক ছেলে শিশুকে মারাত্মকভাবে ছুরিকাঘাত করে হত্যা এবং তার ৩২ বছর বয়সী মাকে গুরুতরভাবে আহত করার দায়ে ৭১ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করেছে মার্কিন পুলিশ। তার বিরুদ্ধে হত্যা এবং বিদ্বেষমূলক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশের অভিযোগ, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ও ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে ওই ব্যক্তি ছোট্ট শিশু ও তার মায়ের ওপর হামলা চালায়।
শিকাগো শহরতলীর উইল কাউন্টি শেরিফের কার্যালয় রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ওই মা ও শিশু মুসলিম হওয়ায় এবং হামাস ও ইসরায়েলিদের সাথে চলমান সংঘাতের কারণে তাদের ওপর ওই ব্যক্তি নৃশংস হামলা চালান বলে গোয়েন্দারা নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছেন।’
এর আগে কর্মকর্তারা স্থানীয় সময় গত শনিবার সকালে শিকাগো থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার (৪০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি বাড়িতে ওই মা ও তার শিশু সন্তানকে উদ্ধার করেন। শেরিফের কার্যালয় জানিয়েছে, হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করা ছেলে শিশুটিকে হত্যার আগে বড় সামরিক-শৈলীর ছুরি দিয়ে ২৬ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল।
অন্যদিকে হামলায় আহত মায়ের শরীরেও এক ডজনেরও বেশি ছুরিকাঘাতের ক্ষত রয়েছে। তিনি রোববার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তবে তিনি বেঁচে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বিবিসি বলছে, হামলায় অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম জোসেফ কসুবা। শনিবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় ৭১ বছর বয়সী এই অভিযুক্তের কপালে কাটা দাগ ছিল। ৩২ বছর বয়সী ওই নারী এবং তার ৬ বছর বয়সী ছেলে সন্তানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে জোসেফ।
যদিও হামলায় শিশুটি মারা গেলেও ওই মা বেঁচে যান। গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দারা জোসেফকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ‘প্রতিশোধ’ নিতে এই হামলা চালায় সে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার বাড়ির বেডরুমে ওই নারী এবং তার শিশু সন্তানের ওপর হামলা চালায় জোসেফ। আহত অবস্থায় কোনও রকমে ‘৯১১’ ইমারজেন্সি নম্বরে ডায়াল করেন ভুক্তভোগী নারী। পুলিশের দল সেখানে পৌঁছে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই নারী ও তার সন্তানকে পড়ে থাকতে দেখে। আর বাড়ির সামনেই নির্বিকার ভাবে বসে ছিল অভিযুক্ত জোসেফ।
রয়টার্স বলছে, কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) নিহত ওই শিশুকে ওয়াদেয়া আল-ফায়ুম নামে শনাক্ত করেছে এবং বলেছে আহত ওই নারী হচ্ছেন হানান শাহিন। তিনি ওই শিশুর মা।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সিএআইআর বলেছে, ‘রাজনীতিবিদদের বক্তৃতায়, মিডিয়া আউটলেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ইসলামফোবিক বা ইসলামবিদ্বেষী প্রোপাগান্ডা এবং ফিলিস্তিনি-বিরোধী বর্ণবাদ বন্ধ করতে হবে।’