হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ও জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা গেছেন।
সোমবার ঢাকায় শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রোববার তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সোমবার তার আরেকটি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।
ঢাকার বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল রেজাউর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘’রাত ৮টা ৪০ মিনিটে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে (হার্ট অ্যাটাক) হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এর আগে সন্ধ্যায় তার আরেকটি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল।
তিনি জানান, মি. সাঈদী বহুদিন ধরে হৃদরোগের জটিলতায় ভুগছিলেন। এর আগে তার হৃদপিন্ডে পাঁচটি স্টেন্ট পড়ানো হয়েছিল।
মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাগারে থাকার সাজা হয়েছিল দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদীর।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে মোট বিশটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এসব অভিযোগের মধ্যে ছিল ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পিরোজপুরে হত্যা, হত্যায় সহযোগিতা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ এবং ধর্মান্তরে বাধ্য করা।
অভিযোগে বলা হয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর তিনি আধা মিলিশিয়া রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাকিস্তানী বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন।
যে বিশটি অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল, তার মধ্যে আটটি অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। এর মধ্যে দুটো অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়।
তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আপীল বিভাগ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রিয়
ইসলামিক বক্তা ছিলেন সাঈদী
বাংলাদেশের মানুষের কাছে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পরিচিতি পান মূলত আশির দশকের শুরু থেকে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তখন তিনি ‘ওয়াজ মাহফিল’ নামে পরিচিত ধর্মীয় সমাবেশ গুলোতে একজন বক্তা হিসেবে হাজির হতে শুরু করেন।
পিরোজপুরের জিয়ানগরের সাঈদখালিতে ১৯৪০ সালে জন্ম নেন জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
সাঈদখালির মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, জন্মের পর তিনি এলাকায় পরিচিত ছিলেন দেলোয়ার শিকদার নামে।
বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের যে ওয়ার্ডটির অধীনে সাঈদখালি গ্রাম, সেই ওয়ার্ডের একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হারুণুর রশীদ ২০১৩ সালে বিবসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছিলেন।
“ওনাকে সবাই দেলোয়ার শিকদার নামে চিনতো। স্বাধীনতার সময় তো আমার বয়স খুব কম ছিল। এ বিষয়ে আমি বলতে পারবো না। তবে আমি শুনছি এইটা। ওনার বংশ শিকদার বংশ। ওনার নাম কিভাবে সাঈদী হলো সেটা বলতে পারবো না। হয়তো সাউদখালি নাম থেকেই উনি নিজের নাম করেছেন সাঈদী,” জানালেন তিনি।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরিবারের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হচ্ছেন, শিকদার কখনো তাদের পারিবারিক উপাধি ছিল না। তাঁর ছেলে মাসুদ সাঈদী বিবিসিকে বলেন, সাঈদী তাঁদের পারিবারিক উপাধি।