মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কেন্দ্রীয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি রয়েছে। এছাড়া খাদ্যের নিরাপদ সংক্রান্ত ১০টি বিধিমালা জারি করা হয়েছে। এসব বিধি জারির মাধ্যমে ভেজাল রোধে পরিদর্শন ও তদারকি জোরদার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব তথ্য জানায় মন্ত্রণালয়। এর আগে কমিটি মরণব্যাধি ক্যান্সরসহ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চায়। কমিটি খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় ৭৩টি পণ্য নিম্নমানের হওয়ায় উক্ত ৭৩টি পণ্য জরুরি ভিত্তিতে উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত, পরিবহন, পরিবেশন, সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ এবং বাজার হতে প্রত্যাহারের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্ব স্ব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। ওই ৭৩টি নিম্নমানের পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দায়ী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে ৭৩টি মামলা করা হয়েছে। খাদ্যে ভেজাল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ সহ বিদ্যমান অন্যান্য আইনে নিয়মিত মামলা করা হচ্ছে।
এছাড়া ঢাকাসহ সারাদেশে নিয়মিতভাবে খাদ্যে ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মার্চ ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৪৬৮৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৭৯৮০টি মামলা দায়েরের মাধ্যমে ৫,৬২,৮৫,১৪১ টাকা অর্থদণ্ড ও ২১৭ জনকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং ৪৪৯৬/২০১০ এর ২০১৯ সালের ২০ মে নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন কেমিক্যালের মাধ্যমে ফল পাকানো বন্ধ করার লক্ষ্যে নিরাপদ উপায়ে আম উৎপাদন, সরবরাহ, বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় আম চাষী, ব্যবসায়ী, আম পরিবহণকারী, আম গবেষক, পুলিশ, জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও ভোক্তা সাধারণকে নিয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম ও কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। কর্মশালায় উপস্থিত আমচাষী, ব্যবসায়ী ও পরিবহণকারীদেরকে নিরাপদ আম উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয়ের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়।
এছাড়া সারাদেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ৩টি মনিটরিং এবং জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বাজার, আড়ৎ, গুদামসমূহে আমসহ অন্যান্য ফল পাকানো ও সংরক্ষণে ক্ষতিকর কেমিক্যালের অপব্যবহার রোধে, পাস্তুরিত তরল দুধের নিরাপদ রক্ষা এবং বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় নিম্নমানে পণ্যসমূহ বাজার হতে প্রত্যাহার ও জব্দকরণের কাজ চলমান রয়েছে।
বিস্ফোরক পরিদফতরের সহায়তায় কৃত্রিম উপায়ে অবৈধভাবে আম পাকানোর প্রধান কেমিক্যাল ক্যালসিয়াম কার্বাইডের আমদানিকারক ও ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে বিগত ৬ মাসের আমদানি, মজুত ও ব্যবহৃত কার্বাইডের হিসাব যাচাই করে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে ক্যালসিয়াম কার্বাইডের অপব্যবহার রোধকল্পে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদারে সভাপতিত্বে বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও কমিটি সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার, নুরুল ইসলাম নাহিদ, হাজী মো. সেলিম, মো. আতিউর রহমান আতিক, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, মো. আব্দুল হাই, মো. আয়েন উদ্দিন ও বেগম আঞ্জুম সুলতানা অংশ নেন।
বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।