আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি নির্বাচনের সব ধরনের কার্যক্রম কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী শেষ করতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রেক্ষাপটে নির্বাচনি সামগ্রী কেনার প্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা হতে পারে এমন শঙ্কার কথা উল্লেখ করে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন তিনি।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে যেন নির্বাচন করতে পারি, সে বিষয়ে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখবো। ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম দিকে ভোট অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সংবিধানে নির্দিষ্ট সময়ের আগেও নির্বাচন হতে পারে এমন প্রভিশন আছে। নির্দিষ্ট সময়ের দু’এক মাস আগে ভোট হলেও নির্বাচন করার প্রস্তুতি যেন ইসির থাকে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এসব নির্দেশনা দেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, সভায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে কেমন প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান সিইসি। একইসঙ্গে ভোট সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে পরামর্শও নেন। সভায় ইসি সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের বক্তব্যে আচরণ বিধি লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান। আচরণ বিধি লঙ্ঘন বা নির্বাচনি অভিযোগ জানাতে ৯৯৯ এর মতো হটলাইন চালুর পরামর্শ দেন তিনি। সভায় ভারতের ভোটগ্রহণের উদাহরণ নিয়েও আলোচনা হয়।
জানা গেছে, এটি নির্বাচন কমিশনের মার্চ মাসের নিয়মিত মাসিক সমন্বয় সভা ছিল। এতে সভাপতিত্ব করেন, ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। রুদ্ধদ্বার সভায় প্রথা ভেঙ্গে এই প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশনার নিজেদের আগ্রহ থেকেই অংশ নেন। সভায় ইসির মাঠ পর্যায়ের ১০ অঞ্চলিক কর্মকর্তা, ইসি সচিবালয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভাশেষে সিদ্ধান্তের বিষয়ে ব্রিফিং করে ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নির্বাচন কমিশন আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সচিবলায়কে নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন তাদের ঘোষিত রোডম্যাপ থেকে প্রস্তুতি পিছিয়ে না থাকি। নির্বাচনের টপ টু বটম, যেমন মালামাল ক্রয় থেকে শুরু করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন পর্যন্ত সকল বিষয়ের ওপর তারা রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্দেশনা দেন। আমাদেরও বলেছেন কোন বিষয়ে আমরা পিছিয়ে আছি।
বৈঠকের আলোচনার বিষযে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে আমরা জানতে চেয়েছি ব্যালট বক্সগুলো কোথায় আছে, কিভাবে আছে, সেগুলোকে কিভাবে যাচাই করে তারা আমাদের রিপোর্ট দেবে- এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো বাস্তবিক অর্থেই ইসির অভ্যন্তরীণ কাজ।
সূত্র জানায়, বৈঠকে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আবার সংবিধানে ওই সময়ের আগেও ভোট হতে তার প্রভিশন রয়েছে। সংবিধানকে সামনে রেখেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনি সামগ্রীর যেগুলো বিদেশ আমদানি করতে হয়, অনেক সময়ে নানা জটিলতায় শিপমেন্ট ফেল করে, মালামাল ক্রয়ের টেন্ডার বাতিল হয়। তবে এসব অজুহাতে নির্বাচন আয়োজনে ফেল করার সুযোগ নেই। প্রয়োজনে আগেই প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো শেষ করতে হবে।
আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার ওপর জোর দেন সিইসি। আলোচনার এক পর্যায়ে বিগত নির্বাচনগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভূমিকার বিষয়টি ওঠে আসে। সভার এক পর্যায়ের সিইসি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান, ব্যালট বক্সে ইসির সরবরাহ করেনি এমন ব্যালট পেপার ঢুকিয়ে রাখার সুযোগ আছে কিনা?
জবাবে ইসি কর্মকর্তারা বলেন, ব্যালটের মুড়ির সঙ্গে হিসাব মেলালে বাড়তি ব্যালট পেপার ঢুকানো হলে তা ধরা পড়ে। এ ধরনের কাজ যাতে না হয়, সেই প্রস্তুতি রাখতে নির্দেশনা দিয়েছেন সিইসি।
সভায় নির্বাচন একদিনে ভোট হওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট সংকটের বিষয়টি সামনে আসলে সিইসি বলেন, প্রশাসনের বাইরে নির্বাচন কমিশনসহ অন্য যেসব বিভাগ রয়েছে তাদের কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা সীমিত আকারে দেওয়া যায় কী না- তা দেখা দরকার। নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার নিজ দক্ষতা ও সাহসিকতায় ভোট তুলতে পারবেন- এমন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। সভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিশ্চিতে জোর দেন সিইসি।
সভায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা আধুনিকায়নের নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, ভোটকেন্দ্রে নির্ধারণে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের সহায়তা নেওয়া। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ওসি জানেন কোথায় ভোটকেন্দ্র হলে ভোটারদের নিরাপত্তা দেওয়া সহজ হবে। আর শিক্ষা কর্মকর্তা জানেন, কোন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ভালো রয়েছে।
সমন্বয় সভায় মাঠ কার্যালয় নিয়েও আলোচনা হয়, দেশের ৩টি জেলা ও ৪৫টি উপজেলায় পৃথক নির্বাচন অফিসের ভবন নেই। সেখানে সরকারি ভবনে নির্বাচন অফিস রয়েছে। এসব ভবন নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া ইসির শূন্য পদের বিষয়ে পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ৪ হাজার ৮৬১টি। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ২ হাজার ২৫৭জন। বাকি ২ হাজার ৬০৪ পদ খালি আছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির শূন্য পদের সংখ্যা ১৬৬টি।
সভায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সুত্র:বিট্রি/বাট্রি