সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন ও তথ্যের জন্যে সব স্থানে, সব অফিসে প্রবেশ করতে পারবেন। খবরের সোর্স- উৎস জানতে, সাংবাদিকের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। সাংবাদিক সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। সোর্স প্রকাশ না করার ক্ষেত্রে আইন সুরক্ষা দিয়েছে। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে দেয়া আছে।
গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চর্তুথ স্তম্ভ। এটা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আধুনিক বিশ্বে জানার অধিকার সবারই আছে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষায় সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে হলুদ সাংবাদিকতা গ্রহণ ও সমর্থনযোগ্য নয়। এগুলো বিধানের কথা,স্বীকৃত। তার মানে দাঁড়ায় সংবিধানে থাকা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, ব্যক্তির বাকস্বাধীনতা এবং সাংবাদিকতায় সোর্স না প্রকাশ করার নীতি – রাষ্ট্র স্বীকৃত সাংবিধানিক অধিকার। সাংবাদিকদের স্বীকৃত অধিকার। আগেও ছিল, এখনও আছে। তবে আলোচনা কেন। হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত এক রীট-মামলার নিষ্পত্তিতে এমন পর্যবেক্ষণ- অভিমত তুলে ধরেন। তাতেই আবার আলোচনায় ওঠে আসে সাংবাদিকের অধিকার। সেই পুরনো কথা।
গত বছরের ২ মার্চ ‘২০ কোটিতে প্রকৌশলী আশরাফুলের দায়মুক্তি! দুর্নীতি দমনে দুদুক স্টাইল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। সেই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনা হলে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে দুদকের নথিপত্র তলব করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি প্রতিবেদককে তার তথ্য- উপাত্ত দিয়ে আদালতকে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেন। শুনানিতে দুদকের আইনজীবী ওই প্রতিবেদনকে ‘মাফিয়া জার্নালিজম’ বলে প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন। পরে রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন আদালত। এ বছরের ২১ জুন এ রায় দেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মোঃ ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত হয়। রায়ে আদালত এসব কথা বলেন। আদালত আরও বলেন, খবর নিয়ে অভিযোগ থাকলে আগে প্রেস কাউন্সিলের শরণাপন্ন হতে পারেন। সাংবাদিকের সংবাদের সোর্স আমরা জানতে চাইনি।
আসুন দেখি, সমাজে মত প্রকাশের মুক্ত পরিবেশ আছে কতটুকু? উত্তর থাকা প্রয়োজন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ডঃ ইফতেখারুজ্জামানের একটি মন্তব্য, নাগরিকদের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই প্রতিবন্ধকতা বাড়ছে বলেই প্রমান পাওয়া যায়। কিছু নতুন আইন হয়েছে। এর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। তবে যে কোন স্বাধীনতারও একটা সীমা থাকে। এটা আইনগতভাবে নির্ধারিত। এখানে কোন কোন শ্রেণির মানুষের জন্যে বাক স্বাধীনতা সীমাহীন। আর বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য বাক স্বাধীনতায় অন্তরায় বেড়েই চলছে। এটা এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করছে।
গত ৭ বছরে সাইবার অপরাধের ৯৭ ভাগ মামলাই টেকেনি। চিত্রটি ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের মামলা নিষ্পত্তির। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সোচ্চার গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংগঠনসহ বাম রাজনৈতিক দলগুলো। সব পক্ষের অভিযোগ ছিল, এর মাধ্যমে মানুষের কথা বলার অধিকার সংকুচিত হবে। উদ্দেশ্যমূলক হয়রানির কারণে সমাজে ভীতির সঞ্চার হবে এবং মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হবে। আইনবিদদের ভাষ্য, ৯৭ ভাগের বেশি মামলায় আসামির খালাস বা অব্যাহতির তথ্য এ আশঙ্কাগুলোকে সত্য প্রমান করছে।
রেকর্ড সাংবাদিক জেলে :
বিশ্বজুড়ে কারাবন্দি সাংবাদিকের সংখ্যা এবছর নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে। এবছর ৫৩৩ জন সাংবাদিক কারাবন্দি হয়েছেন। গত বছরের চেয়ে ৪৫ জন বেশি। সবচেয়ে বেশি ১১০ সাংবাদিককে জেলে পাঠিয়েছে চীন। এরপর রয়েছে সেনাশাসিত মিয়ানমার ৬২ জন আর ৪৭ জনকে জেলে পাঠিয়ে তৃতীয় ইরান।
এবছর ৭৮ নারী সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ১৮ জন বেশি। এটাও রেকর্ড।
সাংবাদিক হত্যার ঘটনাও বেড়েছে। এবছর ৫৭ সাংবাদিক হত্যার শিকার হন। ৮ জন যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহের সময় মারা যান।
সাংবাদিকতা বিশ্বব্যাপীই ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। তবে এ ঝুঁকি বেড়েছেই চলছে। নিরাপত্তার বিষয়টি আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে খবর প্রকাশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করায় উদ্বেগ বাড়ছে।
সাংবাদিকদের আয়কর:
সাংবাদিকদের পেশাভিত্তি দাঁড়ায়নি। তাই তাদের আয়কর দেয়ার প্রবণতাও কম। এদিকে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আয়কর প্রতিষ্ঠানের মালিকরা দেবেন বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত- নবম ওয়েজবোর্ড মন্ত্রী সভা কমিটির দুটি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের রুল যথাযথ ঘোষণা করে ৬ নভেম্বর বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ সোহরাওর্দীর বেঞ্চ ওই রায় দেন। ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর ওই রিট করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা এমপ্লোয়ি ইউনিয়নের সেক্রেটারি মাহবুবুজ্জামান। এতে সাংবাদিকতা পেশায় শৃঙ্খলা আরও বাড়বে।
লেখকঃ সাংবাদিক মাসুক আলতাফ চৌধুরী
সাবেক সভাপতি কুমিল্লা প্রেস ক্লাব।