সীমান্তে নিরস্ত্র নাগরিক হত্যা, আহত ও মারধরের ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে একমত পোষণ করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এর আঞ্চলিক কর্মকর্তারা।
ভারতের কলকাতায় ৪ দিনব্যাপী (১৩- ১৬ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত বিজিবি ও বিএসএফ আঞ্চলিক কমান্ডার পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে তারা এই ঐক্যমতে পৌঁছান। সোমবার এই সম্মেলন সমাপ্ত হয়।
ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় যৌথটহল পরিচালনা, জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি আরও বেগবান করা এবং বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উভয় দেশের কর্মকর্তারা সম্মত হন।
সম্মেলনে বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বিশেষ করে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ও নেশাজাতীয় ট্যাবলেট ইত্যাদি পাচার রোধ, স্বর্ণ, অস্ত্র ও গরু চোরাচালান রোধে উভয় বাহিনীর মধ্যে তাৎক্ষণিক ও প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান এবং এ ধরনের অপরাধ নির্মূলে এরসাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
সীমান্তে চোরাচালান রোধে বিজিবি ও বিএসএফ যৌথ টহল বৃদ্ধির বিষয়েও উভয় বাহিনীর কর্মকর্তারা সম্মত হন। আন্তর্জাতিক সীমানা লংঘন করে অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম, অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করার বিষয়ে উভয় কর্মকর্তারা একমত হন।
আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অবৈধ ও অননুমোদিত নির্মাণকাজ না করার ব্যাপারে এবং বন্ধ থাকা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজগুলো পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখতে এবং পারস্পারিক আস্থা বৃদ্ধির জন্য প্রীতি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এবং বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপ আয়োজনের ব্যাপারে উভয় পক্ষ সম্মতি জ্ঞাপন করেছে।
বিজিবি ও বিএসএফ প্রতিনিধিদলের প্রধান সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং সীমান্তে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
১৩ নভেম্বর ভারতের কলকাতায় এ সীমান্ত সম্মেলন শুরু হয়। বিজিবি’র উত্তর-পশ্চিম রিজিয়ন, রংপুর-এর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ বি এম নওরোজ এহসানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবং বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. অতুল ফুলজেলের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন।
সম্মেলনের শুরুতে বিএসএফ প্রতিনিধিদলের প্রধান ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. অতুল ফুলজেলে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও সার্বিক সহযোগিতার জন্য বিজিবি ও বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি কার্যকর ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি)’ বাস্তবায়নে উভয় বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সীমান্তে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বিজিবি প্রতিনিধিদলের প্রধান এ বি এম নওরোজ এহসান সীমান্ত সমস্যা সমাধানে জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইন-১৯৭৫ অনুসরণ এবং কার্যকরভাবে সিবিএমপি বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি উভয় বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতায় অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।