ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে নাপা সিরাপ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর মুল রহস্য উৎঘাটন করে পুলিশ। শিশুদের মা লিমা নিজেই সন্তানদের বিষমাখা মিষ্টি খাইয়ে হত্যা করে। হত্যার দায় স্বীকার করে মা লিমা বেগম আদালতে স্বীকারক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আফরিন আহমেদ হ্যাপী বৃহস্পতিবার তার জবানবন্দি নেন।
গত ১০ মার্চ জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাঈল হোসেনের দুই ছেলে ইয়াসিন (৭) ও মোরসালিনের (৫) মৃত্যু হয়। সে সময় তাদের মা লিমা বেগম নাপা সিরাপ খেয়ে তার দুই ছেলের মৃত্যু হয় বলে প্রচারণা চালায়।
ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় বৃহস্পতিবার পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের তথ্য দিয়ে বলেন, সফিউল্লাহ নামে ব্যক্তির সাথে পরকীয়া সম্পর্ক করে তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন লিমা। সফিউল্লাহ বিয়ের শর্ত হিসেবে দুই সন্তানকে ছেড়ে আসার শর্ত দেয়। একপর্যায়ে সফিউল্লাহ ও লিমা পরিকল্পনা অনুযায়ি সফিউল্লাহর দেওয়া বিষমাখা মিষ্টি দেওয়ার পর সেই মিষ্টি লিমা তার দুই সন্তানকে খাওয়ান। বিষেই দুই শিশুর মৃত্যু হয়।
পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, “পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে লিমাকে আদালতে পাঠায়। বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আফরিন আহমেদ হ্যাপী তার জবানবন্দি নেন।”
লিমা একটি চালকলে কাজ করতেন। সেই সুবাদে শ্রমিক সর্দার সফিউল্লাহর সঙ্গে লিমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লিমাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতেন সফিউল্লাহ। লিমার স্বামী ইসমাঈল হোসেন চোখে কম দেখেন এবং শারীরিকভাবেও কিছুটা অক্ষম বলে পুলিশের ভাষ্য। সেজন্য লিমা তাকে ছেড়ে সফিউল্লাহকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।
দুই শিশুকে বিষ মাখানো মিষ্টি খাওয়ানোর পর লিমা প্রচার করেন ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ তাদের মৃত্যু হয়। কিন্তু পরীক্ষায় ওই সিরাপে ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সুপার বলেন, শুরু থেকেই লিমাকে তাদের সন্দেহ হয়।
“ঘটনার দিন সফিউল্লাহর সঙ্গে ১৫ বার ফোনে কথা বলেন লিমা। ফোনকলের সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার কথা। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন লিমা।
এ ঘটনায় শিশুদের বাবা ইসমাঈল হোসেন সফিউল্লাহ ও লিমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সফিউল্লাহ এখনও পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিডি