গণমাধ্যম জাতির জন্য আয়না। সেই আয়নায় ভেসে ওঠে জাতির ও দেশের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু যারা সমাজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেন সেই গণমাধ্যমকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় ভোগেন।
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সাংবাদিকদের চাকরির নিশ্চয়তা তৈরি হয়নি। সাংবাদিকদের বেতন ভাতা নিশ্চিতে ওয়েজ বোর্ড চালু হলেও গুটিকয়েক পত্রিকা ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন দিয়ে থাকে। আবার অনেক পত্রিকায় কয়েক মাসের বেতন বন্ধ। যাদের একটু নাম আছে তাদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা বেশি।
এছাড়া সাংবাদিকদের নানা চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়। কখনো সেটা কর্পোরেট, কখনো বিজ্ঞাপন বা প্রভাবশালী কোনো মহলের কাছ থেকে সেই চাপ আসে। এর বাইরেও আরও একধরণের চাপ আছে, যেটা হলো সাংবাদিকদের সেলফ সেন্সরশিপে বাধ্য করে। এই সেলফ সেন্সরশিপ শুরু হয়েছিল সংবাদপত্রের গোড়াপত্তনে।
বর্তমান সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তবে সেখানে একটা প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়গ। সব মিলে সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জের মুখে সাংবাদিকদের কাজ করতে হয়।
সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনকে এখন মাধ্যমকেই লড়তে হচ্ছে নানা ফ্রন্টে। মোবাইল, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ গণমাধ্যমকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। মোবাইল ফোন এখন বিশ্বের এক নম্বর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। সাংবাদিকদের বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে সিটিজেন জার্নালিজম। এখন সবার হাতেই স্মার্টফোন। যেকোনো ঘটনার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিলেই মুহূর্তেই মানুষ জেনে যাচ্ছে। খবরটি জানার জন্য পরদিন পত্রিকার অপেক্ষা করতে হয় না। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর আমাদের সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। কিন্তু সাংবাদিকতা পূর্ণাঙ্গ রূপ পাওয়ার আগেই দেশের ওপর নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এর পর সামরিক শাসনের আমলে সাংবাদিকতা পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিস্তার ঘটে। বর্তমান সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে তখনকার গণমাধ্যম একেবারেই প্রাথমিক অবস্থায় ছিল। সে সময় কোনো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল অথবা রেডিও স্টেশন না। স্বাধীন গণমাধ্যম বলতে শুধু সংবাদপত্র ছিল। আর সেটাও মূলত ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ ও ‘সংবাদ’-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। দেশের মানুষের তখন ইন্টারনেট, অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না।
বাংলাদেশে প্রকৃত সাংবাদিকতার বিকাশ শুরু হয় ১৯৯১ সাল পরবর্তী সময়ে। তখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতায় আসেন। বর্তমানে দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে অনেক সংবাদপত্র, সাপ্তাহিক পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু হয়েছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ঢাকা থেকেই প্রকাশিত হচ্ছে ৫০২টি দৈনিক এবং ৩৪৮টি সাপ্তাহিক পত্রিকা। অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। এই মুহূর্তে ২৬২টি নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে, যার মধ্যে আছে প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্রগুলো ওয়েবসাইট। এছাড়া, দেশে অনেকগুলো বেসরকারি এফএম রেডিও স্টেশনও আছে। তবে গণমাধ্যমের সংখ্যা বাড়লে অনেক মালিক গণমাধ্যমকে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রচারযন্ত্র হিসেবে দেখেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং গত ৫০ বছরের যাবতীয় অর্জনের সঙ্গে গণমাধ্যমের এক বিশাল সংযোগ। ভাষা আন্দোলন ও পূর্ববাংলার বিভিন্ন আন্দোলনে কর্মসূচিকে বেগবান করার পেছনে সংবাদপত্রগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্ন লেখনির কারণে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাক বাহিনীর অন্যতম টার্গেট হয় ইত্তেফাক ও দি পিপলস্। বোমা মেরে বিধ্বস্ত করা হয় এ দুটি সংবাদপত্র অফিস। অগ্নিসংযোগ করা হয় সংবাদ অফিসে।
সরকারপক্ষের দাবি, বিশ্বের বহুদেশের চেয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেক বেশি স্বাধীন। সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম যে পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে, অনেক উন্নত দেশেও তা নেই। সংগৃহিত: জানি