মৃত্যু কোথায় হবে; এটা কি নিশ্চিত করে বলা যায়? একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানেন কার মৃত্যু কখন কোথায় হবে?
আল্লাহর বাণী- ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে’। আল্লাহ ছাড়া মৃত্যু থেকে কেউই বাঁচতে পারবেন না। কিন্তু কার মৃত্যু কোথায় হবে- এ কথা কি কেউ নশ্চিত করে বলতে পারবে? মানুষের মৃত্যু কোথায় কোন স্থানে হবে? এ সম্পর্কে ইসলামের কোনো দিকনির্দেশনা আছে কি?
যার মৃত্যু যেখানে নির্ধারিত আছে, সেখানেই তাঁর মৃত্যু হবে। এবার নির্ধারিত ব্যক্তি মৃত্যুর স্থানে উপস্থিত থাকা কিংবা দূরে থাকুক। তাকে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছানোর দায়িত্বও মহান আল্লাহর। এ সম্পর্কে হাদিসে পাকে সুস্পষ্ট বর্ণনা এসেছে-হজরত আবু আযযাতা ইয়াসারি ইবনে আবদিল্লাহ আল-হুজালি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর কোনো বান্দাকে নির্ধারিত স্থানে মৃত্যুদান করতে চান; তখন (তাকে) সেখানে (যাওয়ার জন্য) সেই বান্দার কোনো না কোনো প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন।’ (আদাবুল মুফরাদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, মুসতাদরাকে হাকেম)
কোরআনুল কারিমের বর্ণনায় মৃত্যু থেকে পালিয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আর তা কেউ পারবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। তিনি বলেন-أَيْنَمَا تَكُونُواْ يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ وَإِن تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَقُولُواْ هَـذِهِ مِنْ عِندِ اللّهِ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُولُواْ هَـذِهِ مِنْ عِندِكَ قُلْ كُلًّ مِّنْ عِندِ اللّهِ فَمَا لِهَـؤُلاء الْقَوْمِ لاَ يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثًاতোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। বস্তুত তাদের কোনো কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোনো অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে। বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোনো কথা বুঝতে চেষ্টা করে না।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৭৮)
মৃত্যু যে নির্ধারিত স্থানে সংঘটিত হবে তা প্রমাণিত সত্য। এমনই ঘটনা ঘটেছিল পয়গাম্বর ও বাদশাহ হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের পরিষদবর্গের এক মন্ত্রীর ক্ষেত্রে। তা ছিল এমন; যা দেখে স্বয়ং মালাকুল মাউতও বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন-
Advertisement
মালাকুল মাউতের বিস্ময়!হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম নিজের এক মন্ত্রীর সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। এমন সময় খুব সুন্দর চেহারা ও দামি পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি সুলাইমান আলাইহিস সালামের মজলিশে প্রবেশ করল এবং কিছুক্ষণ বসার পর চলে গেল। তার যাওয়ার পর মন্ত্রী সুলাইমান আলাইসি সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর নবি! এ মাত্র আপনার কাছে যে লোকটি এসেছিলে, ওই ব্যক্তি কে?
হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম বললেন, আমার কাছে আসা ব্যক্তি ছিলেন, ‘মৃত্যুর ফেরেশতা বা মালাকুল মাউত’।
এ কথা শুনে মন্ত্রীর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল এবং সে কাঁপতে শুরু করল। আর বলল যে, হে নবি হজরত! অনুগ্রহ করে আমার জন্য বাতাসকে হুকুম দিন, বাতাস যেন আমাকে হিন্দুস্তানে (সেখান থেকে অনেক দূর) পৌঁছে দেয়। কারণ আমার জন্য এটি অসম্ভব যে, যেখানে মৃত্যুর ফেরেশতা বসে আছে সেখানে আমি বসে থাকি।
হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম মন্ত্রীর আবেদন মঞ্জুর করলেন। মন্ত্রীকে দীর্ঘ দূরত্বে হিন্দুস্তান পৌছে দেয়ার জন্য বাতাসকে নির্দেশ দিলেন। বাতাস পয়গাম্বরের নির্দেশ পালনে তাকে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌছে দেন।
Advertisement
মন্ত্রী সেখান থেকে হিন্দুস্থান চলে যাওয়ার পর মালাকুল মাউত আবারও উপস্থিত হলো। তিনি হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার মন্ত্রী কোথায়?
মালাকুল মাউতকে জানানো হলো- আপনার ভয়ের কারণে বাতাসের সাহায্যে মন্ত্রীকে (মৃত্যুর নির্ধারিত গন্তব্যে) হিন্দুস্তানে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আসলে এটি ছিল মহান আল্লাহর কুদরত। কারণ যার মৃত্যু যেখানে লেখা আছে সেখানেই হবে।
কিছুক্ষণ আগে যখন আপনার মজলিশে এসে ওই মন্ত্রীকে দেখলাম, তখন আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম। কারণ আল্লাহ তাআলা আমাকে হিন্দুস্থান গিয়ে এ ব্যক্তির রূহ কবজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথচ আপনার এখানে এসে দেখি সে কিনা আপনার মজলিসে বসা?
সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- হিন্দুস্থান এখান থেকে হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। যেখানে সহজে যাওয়াও সম্ভব নয়। অথচ আল্লাহর জন্য তা কতইনা সহজ। আল্লাহ যা চান তা করতে সক্ষম। তিনি সব সময় সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং কোরআনের বর্ণনা, হাদিসের নির্দেশনা এবং হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ও মন্ত্রীর ঘটনা থেকে প্রমাণিত যে, মৃত্যু থেকে পালিয়ে থাকার যেমন কোনো সুযোগ নেই। তেমনি যার মৃত্যু যেখানে নির্ধারিত কোনো না কোনোভাবে মহান আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকে সেখানে পৌঁছাবেনই। এটিই মহান আল্লাহর নির্ধারিথ বিধান।
আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর আগে মুসলিম উম্মাহকে পরকালের পাথেয় গ্রহণ করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি রাখার তাওফিক দান করুন। সঠিক পথে নিজেকে পরিচালিত করার তাওফিক দান করুন। পরকালের সম্বল অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।