আগামী শীতে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে বলেছেন বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী তার ত্রাণ ভাণ্ডারে কম্বল গ্রহণ অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে যখনই শীতকাল আসছে পৃথিবীর সব দেশে আবার কিন্তু করোনাভাইরাস দেখা দিচ্ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড বা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে এর প্রাদুর্ভাব কিছুটা দেখা যাচ্ছে, বাড়ছে।
তিনি বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে করোনা নেই, সবার মধ্যে একটু আয়েশী ভাব এসে গেছে। এখন সময় এসেছে আবার সতর্কতা অবলম্বন করার। আর সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে ইনশাল্লাহ এই প্রাদুর্ভাব আমাদের বাংলাদেশকে আক্রান্ত করতে পারবে না।’
‘শীতকাল এলে একটু ঠাণ্ডা লাগলে সর্দি-কাশি হয়। আর সর্দি-কাশিটা হলেই কিন্তু এই করোনাভাইরাসটা…সেই দিকে সবাইকে একটু সতর্ক থাকতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে এই ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। যেন আবার এই করোনার প্রাদুর্ভাব না দেখা দেয়। সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে।’
সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাস্কটা অবশ্যই পরে থাকতে হবে। এই মাস্কটা পরে থাকলে পরে কেউ যদি সংক্রমিত হয়ে কথা বলতে আসে আপনি নিজে সংক্রমিত হবেন না।
প্রতিষেধক টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও অন্যকে করোনা সংক্রমিত করতে পারেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন যারা নিয়েছে, যদি তাদের কারও করোনা হয়, সে কিন্তু করোনাটা ছড়াতে পারে। নিজে হয়তো অত বুঝবে না, কিন্তু দেখা যাচ্ছে সে অন্যকে সংক্রমিত করছে। এ বিষয়ে আমার মনে হয় দেশবাসীকে এখন থেকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। এ বিষয়ে আরও প্রচার আমাদের দরকার, মানুষকে সতর্ক করা দরকার।’
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সবাইকে আমলকি, আমড়া, লেবু, কমলা, জাম্বুরা, টমেটোসহ ভিটামিন সিযুক্ত শাক-সবজি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্
আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সবাইকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ইতোমধ্যে টিকাদান কর্মসূচি যেটা চলছে, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে আমরা সবাইকে টিকা দিতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষ যেন বাদ না যায়, সব নীতিমালা অনুযায়ী টিকা গ্রহণ করার মতো যোগ্য প্রত্যেকটা মানুষ টিকা পাবে, সে ব্যবস্থাটা আমরা করেছি।
স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরও টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকাদান কর্মসূচি চলছে দেশব্যাপী। পাশাপাশি আমাদের ছাত্রসমাজকে আমরা টিকা দিচ্ছি এবং স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরও টিকা দেবো। সে প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নিয়েছি। দু-একদিনের মধ্যেই আমরা কাজ শুরু করবো।
সরকার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সব কিছুতেই একটা স্থবিরতা বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বাংলাদেশে আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি যেন কোনো মতে কোনো কিছু স্থবির না হয়, অন্তত সচল থাকে। সেদিক থেকে আমরা মনে করি বাংলাদেশ যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে।
অনুষ্ঠানে ৩৭টি ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডারে মোট ২৬ লাখ ৪৫ হাজার পিস কম্বল এবং ১০ লাখ টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্ত থেকে তার পক্ষে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এসব অনুদান গ্রহণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস্ (বিএবি) চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংক মালিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের যে কোনো দুঃসময়ে দেখেছি আমাদের ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন সব সময় এগিয়ে আসে। প্রত্যেক ব্যাংক সব সময় সহযোগিতা করে। এমনকি এটা আমাদের বলারও প্রয়োজন হয় না। আপনারা নিজেরা এগিয়ে আসেন মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য। সুত্র:পিআইবি