ব্যাপক আলোচিত কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়াকে (২২) ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এই আসামি যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারে, সেজন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আজ রবিবার শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত দেবেন বিচারক।
অন্যদিকে চাঞ্চল্যকর এ মামলার বাদী মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া ও চারজন সাক্ষীর প্রথমবার জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক গোলাম মোক্তার আশরাফ উদ্দিন। কুমিল্লা জেলা পিবিআই কার্যালয়ে গতকাল শনিবার প্রায় চার ঘণ্টা ধরে এ জবানবন্দি নেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর মুনিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি ভিকটিমের প্রেমিক আনভীর যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, আদালতের মাধ্যমে সেই বার্তা নতুন করে দেশের সব ইমিগ্রেশনে দিতে চায় তদন্ত সংস্থা পিবিআই। এ জন্য গত বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতে আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সেই আবেদনের শুনানি আজ হওয়ার জন্য তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। শুনানি শেষে আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন আদালত। এর আগে মুনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর পর গত মে মাসে আনভীরের দেশত্যাগে এমন নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। পরবর্তীতে গুলশান থানা পুলিশের দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামিকে অব্যাহতি দেন ঢাকার সিএমএম আদালত। এরপর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা করেন তার বোন নুসরাত। আদালতের নির্দেশে যা তদন্ত করছে পিবিআই।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে মুনিয়া মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর গতকাল শনিবার ঢাকা থেকে কুমিল্লা যান পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরোয়ার জাহান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক গোলাম মোক্তার আশরাফ উদ্দিন। তারা কুমিল্লা জেলা পিবিআই কার্যালয়ে বসে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল প্রায় চারটা পর্যন্ত মামলার বাদী নুসরাত ও চারজন সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলেন। তাদের জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন। এ সময় বাদীপক্ষের অন্যতম প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ সালাউদ্দিনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, মুনিয়ার শরীরে পুরুষের ডিএনএ পাওয়া, গুলশানের বাসায় মূল আসামি সর্বশেষ কত তারিখে গিয়েছিল, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্য মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে শ্যোনঅ্যারেস্ট দেখানো হতে পারে কিনা—এসব বিষয় নিয়েও সেখানে আলোচনা হয়। জানা গেছে, তদন্তভার পাওয়ার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর গুলশানের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। সেখানে তিনি সেই ভবনের বাসিন্দাদের কাছ থেকেও তথ্য নেন।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ আদালতে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বাদী হয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর এই মামলা করেন। ওই আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ বেগম মাফরোজা পারভীন মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ দেন। এদিন দুপুরে নুসরাতের জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত। ধর্ষণের পর হত্যার এই চাঞ্চল্যকর মামলায় প্রধান আসামি বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর (৪২)। পাশাপাশি তার বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান (৭০), মা আফরোজা সোবহান (৬০), আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা (৪০), হুইপপুত্র শারুনের সাবেক স্ত্রী সাইফা রহমান মিম (৩৫), কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, পিয়াসার বান্ধবী ও ঘটনাস্থল গুলশানের ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী শারমিন (৪০) ও তার স্বামী ইব্রাহিম আহমেদ রিপনকে (৪৭) আসামি করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে গত মঙ্গলবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) (২)/৩০ ধারা এবং ৩০২/৩৪ ধারার মামলাটি (নম্বর-৫) রেকর্ড হয়। তদন্তের জন্য ওই দিনই পাঠানো হয় পিবিআইতে।
গত ২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই রাতেই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন ভিকটিমের বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। সেখানে বলা হয়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মুনিয়ার সঙ্গে। ওই বাসায় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন মুনিয়াকে। নুসরাত দাবি করেন, তার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে আনভীর।
তদন্ত শেষে গত ১৯ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে গুলশান থানা পুলিশ জানায়, আসামির আনভীরের সঙ্গে ঘটনার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হোক। এর বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন বাদী নুসরাত। গত ১৮ আগস্ট পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণ করে ও বাদীর আবেদন খারিজ করে আসামিকে অব্যাহতি দেন ঢাকার সিএমএম আদালত।সুত্র: মানব কন্ঠ