আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আটক আলোচিত চিত্রনায়িকা পরিমনি নিউ ইয়র্কে পাড়ি জমানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় ‘নিউইয়র্ক আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পরীমনি!’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
বিজয় রহমানের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক/দেড় মাস ধরে পরীমনির গতিবিধি লক্ষ্য করা হচ্ছিল। পরীমনি পরিস্থিতি টের পেয়ে নিউইয়র্ক আসতে চেয়েছিলেন বলে তদন্তকারী একটি সূত্র নবযুগকে নিশ্চিত করেছে। পরীমনির মামলা ও গ্রেফতারসহ সার্বিক বিষয়ে দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পরীমনির অপরাধের শেকড় অনেক দূর বিস্তৃত। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি নিউইয়র্ক, লন্ডনসহ নানা দেশের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও অনুষ্ঠান আয়োজকদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। সম্ভবত নিউইয়র্ক বা ওয়াশিংটনে পরীমনি একটি অনুষ্ঠান করার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন বলে তদন্তকারী ওই কমর্কতা জানিয়েছেন।
তবে কোন অনুষ্ঠানে তিনি আসতে চেয়েছিলেন বা কারা তাকে আনার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিলেন সেটি তদন্তের খাতিরে প্রকাশ করেননি ওই কর্তকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, বোট ক্লাবের ঘটনার পর পরীমনির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হয়েছিল। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানানো হয়েছিল। উপরের নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা দাবি করেন যে লকডাউনের কারণে ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস কার্যক্রম বন্ধ বা সীমিত রাখার কারণে পরীমনি ভিসা সংগ্রহ করতে পারেননি। কিন্তু তিনি নিউইয়র্ক, মালয়েশিয়া ও লন্ডনের কয়েক ব্যক্তির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলেন। পরীমনি নিউইয়র্ক বা ওয়াশিংটনের একটি বড় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণও পেয়েছিলেন এবং তার জন্য ভিসা প্রসেস করার প্রস্তুতি চলছিল। এছাড়া সর্বশেষ তিনি মালয়শেয়িার যাওয়ার জন্য তল্পিতল্পা গুটিয়ে ছিলেন বলেও পরীমনির ঘনিষ্ঠজনরা তদন্তকারী সূত্রগুলোকে নিশ্চিত করেছে।
নবযুগের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন যে দৈনিক অন্তত ২০/২৫টি ওভারসিস কল রিসিভ করতেন পরীমনি। এর বেশির ভাগ কল ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও মালেয়শিয়া থেকে। কয়েকটি কল ছিল লন্ডন থেকেও। এদিকে কয়েক দিন আগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া বিতর্কিত মডেল পিয়াসার সাথে চিত্রনায়িকা পরীমনি ও চলচ্চিত্রের বিতর্কিত প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। তারা একসাথে কাজ করতেন বলে র্যাবের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবন, উঠতি মডেল ও নায়িকাদের দিয়ে ব্ল্য্যাকমেইল আর উশৃঙ্খল জীবন ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। পরীমনির সঙ্গে পিয়াসার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিশুরও যোগাযোগ ছিল।
তবে পরীমনির দুবাই ভ্রমণকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। পরীমনিকে চলচ্চিত্রে আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল প্রযোজক রাজের। বনানীতে পরীমনি যে ফ্ল্যাটে বসবাস করেন সেই ফ্ল্যাটটি রাজ তাকে কিনে দেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজ জানিয়েছেন, বিখ্যাত একটি ম্যাগাজিনে পরীমনির ছবি আসার পেছনে জোর লবিং করেছিলেন তিনি। ওই ম্যাগাজিনে তার নাম আসার পর পরীমনি দেশে ও বিদেশের মিডিয়ায় নতুনভাবে আলোচনায় আসেন।
ওই ম্যাগাজিনে পরীমনি প্রায় ১০০টি ছবি পাঠিয়েছিলেন। উঠতি মডেল এবং চলচ্চিত্রে যারা নতুন অভিনয় করতে চায় তাদের সাথে নানা কৌশলে সখ্য তৈরি করতেন প্রযোজক রাজ। তার মোবাইলে বিভিন্ন মডেল ও নায়িকাদের নানারকম ছবি দেখতে পেয়েছে র্যাব। র্যাবের ধারণা, ওই ছবিগুলো ব্ল্যাকমেইল এবং ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতো।
এছাড়াও রাজের উচ্চাভিলাষ ছিল যে ভারতের চলচ্চিত্রের যে রাজকাপুর পরিবার আছে সেই রাজকাপুর পরিবারের মতো তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে। জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদরাাসা থেকে দাখিল পাস করেছিলেন প্রযোজক রাজ। এরপর ঢাকায় এসে বিভিন্ন্ন ব্যবসা শুরু করেন। তিনি চলচ্চিত্রের রঙিন জগতে আসেন। ছবিতে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা হওয়া তার স্বপ্ন ছিল। পরে তা হতে না পেরে তিনি নিজেই তার টাকা চলচ্চিত্রে লগ্নি করেন।
গত বুধবার বিকালে বনানীতে পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় পরীমনির বাসা থেকে ১৯ বোতল বিদেশি মদ, ৪ গ্রাম আইস, ১ ব্লট এলএসডি, সিসা জব্দ করা হয়। এরপর প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ইসলাম রাজের বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ মাদক ও সিসার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এছাড়াও তাদের আরো দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়।