বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাত থেকে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের আবারো বিরোধিতা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, এনআইডি সরিয়ে নিলে কমিশন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একজন নির্বাচন কমিশনার বলছেন, এনআইডি নিয়ে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ কমিশন করছে তা হুট করে তৈরি করা অসম্ভব। তাই এটি কমিশন থেকে সরিয়ে নিলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবার নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অধীনে নেয়ার আগে কমিশনের সাথে আলোচনা করতে হবে। কারণ ইসি মনে করে, এটি নির্বাচন কমিশনের হাতছাড়া হলে তাদের কার্যক্রমের অসুবিধা হবে। এনআইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত প্রায় এক মাস ধরে নির্বাচন কমিশন তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে।
সরকার কাজ শুরু করে দিয়েছে:
তবে এর মধ্যেই জাতীয় পরিচয়পত্র আইন সংশোধন করে এর নিয়ন্ত্রণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের আওতায় নেয়ার প্রাথমিক কার্যক্রম সরকার শুরু করেছে। প্রক্রিয়াটি কিভাবে হবে তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। একইসাথে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কাজ পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে এক চিঠি পাঠিয়ে সরকার তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। তবে কমিশন বারবারই সরকারের এ ধরনের উদ্যোগের বিরোধিতা করে এনআইডি তাদের হাতেই রাখাকে যৌক্তিক বলে দাবি করছে।
ইসির আপত্তির কারণ
রাষ্ট্রের একটি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে সরিয়ে সরকার নিজেদের হাতে নেয়ার ক্ষেত্রে কমিশন আপত্তি করছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের বিশাল কর্মযজ্ঞ নতুন করে করতে গেলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে কমিশন। ভোটার তালিকার উপজাত হিসেবে কিছু তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয়। আমাদের নির্বাচন কমিশনের লোকদেরই আমরা তৈরি করেছিলাম, নতুন রিক্রুট করিনি। নির্বাচনের বাইরে এটাকে ম্যানেজ করার যে দক্ষতা- টেকনিক্যাল ও ম্যানেজারিয়াল- তা একদিনে হবে বলে মনে করি না। যদি না হয় তাহলে উপকারভোগীরা ঝামেলায় পড়বে।
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির অংশ হিসেবে প্রথমে ভোটার পরিচয়পত্র তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়াতেই পরে ভোটার পরিচয়পত্রের বদলে জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়।
বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ১০ কোটিরও বেশি মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। দেশে এখন প্রায় ২২ ধরনের কাজের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নাগরিকদের দরকার হয়। কিন্তু এ সেবা সরকার দিতে চাইলে কমিশন তাতে বাধা দিচ্ছে কেন, অথবা বিরোধিতাইবা করছে কেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন,কমিশন বিরোধিতা করছে না। তবে বোঝাতে চাইছেন যে পরিচয়পত্রের বিশাল কর্মযজ্ঞ যেখানে ঠিক মতো চলছে সেখান থেকে সরিয়ে নতুন করে তৈরিটা বাস্তবসম্মত চিন্তা নয়। তার ভাষায়, বিরোধিতা আমরা করছি না। বাস্তবতা তুলে ধরছি।…এটা ম্যানেজ করতে যে জনবল, দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সুবিধা লাগবে সেটা একদিনে বা অল্প সময়ে তৈরি করা সম্ভব নয়।
নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে এসব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। যদিও নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা তৈরি করে আবার জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য সেই ডাটাবেজ দরকার হবে- সেক্ষেত্রে দু’টি আলাদা প্রতিষ্ঠান কাজটি করলে সমন্বয়হীনতা তৈরি হবে বলেও অনেকে সংশয় প্রকাশ করছেন।
সমন্বয়হীনতার কোনো কারণ নেই, বলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের পর বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনআইডি এলে সেবা নিয়ে কোনো জটিলতা বা নির্বাচন কমিশনের সাথে কোনো সমন্বয়হীনতার আশঙ্কা থাকবে না। সঙ্গত কারণেই এটা সরকার যথাস্থানে আসার নির্দেশনা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাজ সাধারণত ভোটার তালিকা তৈরি করা। সেটা তৈরির যত ধরনের সহযোগিতা এখান থেকে পাওয়ার- সেটা তারা পাবেন। কাজেই এ নিয়ে সমন্বয়হীনতার প্রশ্নই আসে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যাই বলা হোক- নির্বাচন কমিশন বলছে, সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে সচিব পর্যায়ে আলোচনার সময়েও তারা এনআইডির নিয়ন্ত্রণ কমিশনের হাতে রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টাই চালাবেন।