নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, জেলা প্রশাসক যেখানে বসবাস করেন সেই বাসভবন সেটা কিন্তু কুমুদিনীর অনুদান। আমরা যেটা ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপতাল বলি সেটা আরপি সাহার অনুদান। আমরা নারায়ণগঞ্জের মানুষ এখন পর্যন্ত সেই হাসপাতালের নাম আরপি সাহা দিতে পারি নাই। আজকে তোলারামকে যে তৈরি করেছে সে সম্পর্কে সম্মান দিতে জানিনা। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কুমুদিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে নারায়ণগঞ্জে একটি হাসপাতাল হবে। এটা শুধু হাসপাতাল না এটা একটা নার্স ট্রেনিং সেন্টারও হবে।
গত কয়েকদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের জুট প্রেসে কর্মরত শ্রমিকদের বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে আয়োজিত এক সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন। ৮ জুন মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়।
সেলিম ওসমান বলেন, একটা শহরকে রোগীমুক্ত রাখার জন্য যা যা করার দরকার সেটা হবে। তাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা আছে যেটা আমাদের নেই। তারা মির্জাপুরে শত শত লক্ষ লক্ষ নারীকে শিক্ষিত করে তুলতে পেরেছে। তাদের পরিবার নারায়ণগঞ্জে বসবাস করে মির্জাপুরে গিয়ে কাজ করেছে। তার প্রেক্ষিতে আমরা আবেদন করেছিলাম নারায়ণগঞ্জে কিছু দেয়া হোক। প্রধানমন্ত্রীরও অনুরোধ ছিল তোমরা নারায়ণগঞ্জে কিছু করো। আজকে নারায়ণগঞ্জের মানুষ বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাই। আগে এটা পাটের কোম্পানী ছিল। কোথায় চলে গেছে আদমজী চিত্তরঞ্জন। রাজনৈতিক কারণে এসমস্ত জিনিসগুলো নাই হয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে গিয়ে ঢাকা গরম করতে হতো। যার কারণে কোনো একটি সরকার দাবিয়ে রাখার জন্য মিলগুলোকে অচল করে দেয়া হয়েছে। যখন আমরা এখানে হাসপাতাল করতে যাচ্ছি তখন কেউ কেউ তাদের উস্কানী দিচ্ছে। আমি ইসমাঈলের (শ্রমিকদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল) সহযোগিতা নিয়েছি। এটা আন্দোলনের দিকে চলে যাচ্ছিল। আমি তাকে অনুরোধ করেছি আন্দোলন নয় এমন কোনো সমস্যা নেই যা টেবিলে বসে সমাধান করা যায় না।
তিনি বলেন, এখানে দুই ধরনের শ্রমিক ছিল একটা প্রতিদিন কাজ করতো আরেকটা চুক্তিভিত্তিক কাজ করতো। এমনও লোক আছে যার দাদা এখানে চাকরি করেছে ৫০ বছর ধরে বসবাস করছে। এটা তো ব্যক্তিগত সম্পদ না দাদা কাজ করেছে বলে সম্পদ তার হয়ে যাবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যারা কাজ করেছে আমরা কুমুদিনীর কাছে অনুরোধ করেছি কোম্পানীর নিয়মে পাওনা শোধ করবে। আর যারা চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছেন তারা যে ঘরে থাকতেন সে ঘর উঠিয়ে নিয়ে যাবে। সেই সাথে সম্মানি বাবদ ৩ হাজার টাকা দেয়া হবে। আমরা মানুষের জন্য কাজ করবো। কিছু মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এরা খুব বড় কাজ করতো না। নারায়ণগঞ্জ শহরের মতো জায়গায় বিনা ভাড়াই থাকতে পারতো। এখন হয়তো সেটা পারবে না। এমনও হতে পারে তারা এখানে চাকরি করতে পারবে। আমরা চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ করবো তাদের কাজ দেয়ার জন্য। এছাড়া আমাদের কাছে যদি আসে তাহলে বিভিন্ন জায়গায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবো। যেটা আমরা পূর্ব থেকে অভ্যস্ত। নিরীহ মানুষের জন্য ইসমাঈল নেতৃত্ব দিয়েছিল বলে সভায় বসে সিদ্ধান্ত হলো।
আমরা ২৫ তারিখের মধ্যে এই জায়গাটা খালি করে দিবো। এখানে জোর জবরদস্তির কিছু না। এখানে যারা সাধারণ জনগণ তাদের বলেছি তোমাদের ত্যাগের বিনিময়ে ১ কোটি মানুষ সুচিকিৎসা পাবে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ যেন অ্যাম্বুলেন্সের মারা না যায়। কিন্তু কোনো এক কমিশনার তাদের আশ্বস্ত করলেন ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হবে। এখানে কিছু পাকিস্তানি বসবাস করে। অনেক মামলা মোকদ্দমায় দেখা গেছে মাদকের সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু আমরা কখনও কথা বলি নাই। তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন খালি করতে হবে যেতেতু একটা হসপিটাল হবে। কুমুদিনীকে বলেছি জায়গা খালি করার সাথে সাথে হাসপাতালের কাজ শুরু করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল হক, চেম্বার অব কমার্স আান্ড ইন্ডস্ট্রিজের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস্ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, চেম্বার অব কমার্স আান্ড ইন্ডস্ট্রিজের পরিচালক শাহাদাত হোসেন ভূইয়া সাজনু, ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু ও নারায়ণগঞ্জ সদর থানা ওসি শাহ জামান সহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, কুমুদিনীতে ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার ও নার্সিং ইনস্টিটিউট নির্মাণ নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষে মালিক, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছিলাম। এখানে শ্রমিকদের প্রাপ্য পাওনা প্রদান সহ যারা পূর্বপুরুষদের সূত্র ধরে বাগানে বসবাস করে আসছিলেন তাদের মালামাল স্থানান্তর বাবদ ৩ হাজার টাকা প্রদান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।