দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ, অন্যদিকে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন কর্মহীন হয়ে পড়া লোকজনসহ নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। অনেকে খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েও খরচের লাগাম টানতে পারছেন না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, অনেকের পক্ষে সংসারের খরচ চালানোই এখন কষ্টকর।
গার্মেন্টস শ্রমিক আয়েশা বেগম কাজ করেন মালিবাগ হাজীপাড়ার একটি গার্মেন্টসে। স্বামী আয়নাল মিয়া রিকশা চালান। দুজনের আয়েই চলে সংসার। বড় মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার পর খরচ বেড়ে যায়। স্বামীর পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়লে ওই বছরই ৬ হাজার টাকা বেতনে গার্মেন্টসে চাকরি নেন আয়েশা বেগম। স্বামী-স্ত্রীর আয়ে ভালোই চলছিল সংসার।
কিন্তু গত বছর মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে বদলে যায় জীবনের গতি। নিজের চাকরি থাকলেও ভাটা পড়ে স্বামীর আয়ে। সংসার চালাতে ধার দেনা করা শুরু হয়। ধীরে ধীরে যখন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল, তখনই আবার আঘাত হেনেছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস।
রাজধানীর বাসিন্দাদের একটি বড় অংশের বর্তমান জীবনচিত্র এটি। ছোট ঢাকা শহর কোটি মানুষের আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করে দিলেও এর বড় অংশই নিম্ন আয়ের। যাদের একটি অংশ থাকে বস্তিতে।
ঢাকা শহরে কী পরিমাণ মানুষ নিম্ন আয়ের তার কোনো জরিপ নেই। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০১৪ সালে একটি বস্তি শুমারি করে। ওই শুমারির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মোট ৩ হাজার ৩৯৪টি বস্তি রয়েছে। এসব বস্তিতে মোট ঘরের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার। বসবাসকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ লাখ।
বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হয়। তাছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের একটি বড় অংশ বস্তির বাইরেও বসবাস করে। এর সঙ্গে ২০২০ সালের শুরুতে দেখা দেয়া করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণেই মধ্যবিত্ত থেকে অনেকে নিম্নবিত্তের তালিকায় নেমে এসেছে।
গত বছরের জুনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক জরিপের তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটির সভাপতি আবুল বারকাত বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউনের ৬৬ দিনে মধ্য-মধ্যবিত্তে থাকা
৩ কোটি ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি ২ লাখ নিম্ন-মধ্যবিত্তে নেমেছে। নিম্ন-মধ্যবিত্তে থাকা ৫ কোটি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি ১৯ লাখ দরিদ্র হয়েছেন। আর দরিদ্র থাকা ৩ কোটি ৪০ লাখ থেকে ২ কোটি ৫৫ লাখ হতদরিদ্র হয়েছেন।
চালের দাম বেড়েই চলছে। দীর্ঘদিন ধরেই লাগামহীনভাবে ছুটছে চালের দাম। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দিলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। উল্টো সিন্ডিকেট সদস্যরা চাউলের দাম আরোও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মিনিকেট ও নাজিরশাল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকা কেজি। মাঝারি মানের পইজাম ও লতা চালের বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা কেজি। মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। করোনা প্রেক্ষাপটে ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবন ধারন করে বেঁচে থাকা কস্টের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষ ও করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ গুলো জীবন যুদ্ধে দিন কাটানোর দৃশ্য এখন সর্বত্র। এভাবে করোনা পরিস্থিতি চলতে থাকলে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে নিম্ন আয় ও কর্মহীন মানুষদের।