বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বাংলাদেশ ইতিহাসে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকবে। বাংলাকে দাবিয়ে রাখতে পারে-এমন কোনো শক্তি নাই। এমন কোনো শক্তি নাই বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারে। শুক্রবার (২৬ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে দেওয়া ভাষণে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সুদৃঢ় সম্পর্ক কেউ নষ্ট করতে পারবে বলেও উল্লেখ করেন নরেন্দ্র মোদি।
তিনি বলেন, স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গঠনে অনেকে আপত্তি তুলেছিল। তাদের সেই আপত্তি বর্তমান বাংলাদেশ ভুল প্রমাণ করেছে। মোদি বলেন, আমি আনন্দিত যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে তার সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। যারা বাংলাদেশ গঠনে আপত্তি করেছিলেন; যারা এখানকার মানুষকে নিচু চোখে দেখতেন, যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, বাংলাদেশ তাদের ভুল প্রমাণ করেছে।
আগামী ২৫ বছর ঢাকা-নয়াদিল্লির জন্য খুব গুরত্বপূর্ণ উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, এটি একটি আনন্দময় কাকতালীয় ঘটনা যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর আর ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর একসঙ্গে পড়েছে। আমাদের উভয় দেশেরই জন্য আগামী ২৫ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ঐতিহ্যের অংশীদার, আমরা উন্নয়নেরও অংশীদার।
ভাষণের সময় নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মজবুত করতে তরুণদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর তাগিদ দেন। এ সময় মোদি ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউরকে স্মরণ করেন। অনুষ্ঠানে গোবিন্দ হালদারের লেখা গান ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলব না’ গানটিও বাংলায় উচ্চারণ করেন।
এছাড়াও ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের খণ্ডাংশও স্মরণ করেন। তিনি জোরালো কণ্ঠে বলেন-‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশের জনগণের মতো ভারতের জনগণের মধ্যেও স্বাধীনতার আকুলতা ছিল। আমাদের যারা শত্রু তারাও বাংলাদেশের শত্রু। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থনে আমি ও আমার বন্ধুরা সত্যাগ্রহ (আন্দোলন) করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেকেই আমার সঙ্গে এখানে আছেন। আমার জীবনের প্রথম আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ। তখন আমার বয়স ছিল ২০-২২ বছর।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গান্ধী শান্তি পুরস্কার দিতে পারা ভারতের জন্য গর্বের ব্যাপার। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে উপস্থিত থাকা এবং এমন একটি পুরস্কার তুলে দিতে পারা আমার জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি।
এর আগে, অনুষ্ঠানে মুজিব কোট পরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন তিনি।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে মোদিকে বহনকারী বিমান। সেখান তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা পৌঁছানোর পর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্বাধীনতার বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।