কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালকে কেন্দ্র করে অর্ধশত দালাল ও এম্বুলেন্স চালক চক্রের সদস্যদের নিকট জিম্মি রোগী ও স্বজনরা। দালাল চক্র ও অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সিন্ডিকেট অনেক শক্তিশালী । এম্বুলেন্স চালক ও দালালদের সংঘবদ্ধ চক্র হাসপাতালে সর্বত্র বিচরন করে। হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলে হাজির হয় দালাল চক্র, কখনও রোগী বা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন বা চিকিৎসাপত্র হাতিয়ে নেয় তারপর চুক্তিকৃত ফার্মেসী থেকে ওষুধ ক্রয় করে রোগীকে দেয়। পড়ে একশত টাকার ওষুধের মুল্য আদায় করে হাজার টাকার চাইতেও বেশি। অপরদিকে এম্বুলেন্স চালক চক্রের সদস্যদের মূল টার্গেট হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা। বিভিন্ন সময়ে সড়কে দুর্ঘটনার শিকার স্বজনহীন রোগীদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসলে উন্নত চিকিৎসা বা রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলেই এম্বুলেন্স চালকরা রোগীকে দ্রুত এম্বুলেন্সে ওঠিয়ে শুরু করে টাকা আদায়ের নানা কৌশল।
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের অনেক সদস্য এ চক্রের সঙ্গে জড়িত।তাদের সহযোগিতায় চক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।গত ১১ ফেব্রুয়ারি এমনই একটি ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে কুমেক হাসপাতালে।সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক তরুণ হাসপাতালের রেজিস্টারে চিকিৎসাধীন ছিলেন।কিন্তু রোগীর স্বজনরা এসে দেখেন ওই রোগী সিটে নেই।এরপর ওই রোগীর খোঁজ মেলে একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে।তবে জীবিত নয়,মৃত অবস্থায়।
ছাড়পত্র ছাড়াই মাহবুবুল আলম বাবুল (২০) নামের ওই রোগী কীভাবে অ্যাম্বুলেন্সে গেলেন সে বিষয়ে কিছুই জানে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।তার মৃত্যু নিয়েও নানা অভিযোগ ওঠে।হাসপাতালের রেজিস্টারের তথ্যমতে,ওই রোগী জীবিত ছিলেন।অথচ অ্যাম্বুলেন্সে পাওয়া গেছে তার লাশ। তাহলে কোথায় ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে,সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আহত তরুণ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের উত্তর বাঙ্গরা গ্রামের শাহিন মিয়ার ছেলে।নিহতের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম জানান,১১ ফেব্রুয়ারি সকালে রোহান নামে একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক কল করে জানায়,বাবুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে।এজন্য দ্রুত বিকাশে ৩০ হাজার টাকা পাঠাতে হবে।কিন্তু এতো টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য না থাকায় আমরা তা পাঠাতে পারিনি।এরপর আরও দুই দফা কল করে প্রথমে ১৫ হাজার এবং সবশেষে ১১ হাজার টাকা দাবি করে সে। এরই মধ্যে রোগীর স্বজন হাসপাতালে এসে দেখেন,আহত বাবুল সিটে নেই।এক পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্সে বাবুলের লাশ দেখতে পায়।
রোগীর স্বজন সাইফুল ইসলামের দাবি, ছাড়পত্র এবং রেফার করা ছাড়াই রোগী অ্যাম্বুলেন্সে গেল কীভাবে আমরা জানি না।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এই মৃত্যু হয়েছে।তারা জীবিত রোগীকে মেরে ফেলেছে।ওই চক্রের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মচারীও জড়িত।
এ বিষয়ে কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন,ওই রোগীকে বৃহস্পতিবার ভোরে সিট থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।তখন হাসপাতালে লোকজন কম থাকে।আমাদের জরুরি বিভাগের তথ্যমতে, ভর্তির সময় ওই রোগী জীবিত ছিলেন।এখন তারা কী জীবিত রোগী নিয়েছেন,না মৃত, সেটা এখনও বলতে পারছি না।
এ ঘটনা তদন্তের জন্য হাসপাতালের ডা. সোহেল, ডা. আবু বকর ও ডা. কাইজারকে নিয়ে তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।তারা আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত করে আমাকে প্রতিবেদন দেবেন।এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।হাসপাতালের কেউ ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা সেটাও তদন্ত করে দেখা হবেবিলে নিশ্চিত করেন পরিচালক।