আন্তঃজেলা অজ্ঞানপার্টি (ক্ষতিকর ঔষুধ প্রয়োগকারী) চক্রের সক্রিয় ৭ সদস্য গ্রেফতার। চোরাই ৩টি মিশুক (অটোরিক্সা) ও মোবাইল উদ্ধার।
পুলিশ সুত্র জানায়, গত ২০/০৫/২০২৩ইং তারিখ দিবাগত রাত্র ১০.৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিম মোঃ দুলাল মিয়া (৪৮), এনআইডি- ৭৭৬৫৩৪১০১৬, পিতা- মৃত বদিউজ্জামান, সাং- বাতাখালী, পোঃ পশ্চিমগাঁও, থানা- লাকসাম, জেলা- কুমিল্লা থানায় হাজির হয়ে মৌখিকভাবে জানান যে, তিনি পেশায় একজন মিশুক চালক।
গত ১৬/০৫/২০২৩ইং তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৬.৪৫ ঘটিকার সময় তিনি যাত্রী নামিয়ে চৌদ্দগ্রাম হতে লাকসাম ফেরত আসার সময় নাঙ্গলকোট পৌর বাজারস্থ সিএনজি স্টেশনে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা ০৪ জন যাত্রীবেশী চোর চক্রের সদস্য ১২০ টাকা ভাড়া নির্ধারন করে। তাদেরকে নিয়ে ভিকটিম দুলাল মিয়া লাকসাম বাইপাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। ইং ১৬/০৫/২০২৩ তারিখ রাত অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার লাকসাম থানাধীন ০৭নং আজগরা ইউপিস্থ আমদুয়ার সাকিনে পৌছালে যাত্রীবেশী চোরদের অনুরোধে তিনি রাস্তার পাশে থাকা চা দোকানের সামনে গাড়ীটি দাড় করলে যাত্রীরা চা-বিস্কুট খায়। যাত্রীবেশী চোরদের একজন ভিকটিমকেও চা-বিস্কুট খাওয়ায়। পুনরায় সবাই গাড়ীতে উঠে রওয়ানা করে রাত অনুমান ০৮.৩০ ঘটিকার সময় লাকসাম বাইপাস পৌছালে ভিকটিম অচেতন হয়ে পড়ে। এই ফাঁকে উক্ত চক্রের সদস্যদের একজন গাড়ীটির নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়। ভিকটিমের পকেটে থাকা নগদ ৪,৫০০/-টাকা ও বাটন মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেয়।
পরবর্তীতে লাকসাম থানাধীন খুন্তা ষ্টীল ব্রীজের রাস্তার পাশে অবচেতন অবস্থায় ভিকটিমকে শুইয়ে দিয়ে তার মালিকানাধীন ব্যাটারী চালিত মিশুক (যাহার মূল্য ১,৩৫,০০০/-টাকা) গাড়ীটি নিয়ে যায়। ইং- ১৭/০৫/২০২৩ তারিখ সকাল ০৭.০০ ঘটিকার সময় পথচারীরা ভিকটিমকে রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় দেখতে পেয়ে তার পরিবারের লোকজনকে সংবাদ দেয়। পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান।
উক্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে মান্যবর পুলিশ সুপার কুমিল্লা মহোদয়ের নির্দেশনায় লাকসাম থানার পুলিশের একটি দল তথ্য প্রযুক্তি ও বিভিন্ন উৎস হতে তথ্য সংগ্রহ করে লাকসাম থানাধীন বিজরা বাজার এলাকা হতে আন্তঃজেলা মলম পার্টির দলনেতা ১। মোঃ শাহজাহান (২৬), পিতা- জাকির হোসেন, মাতা- হোসনেয়ারা বেগম, সাং- পনসাহী (হাজী বাড়ী), পোঃ রহিমা নগর, থানা- কচুয়া, জেলা- চাঁদপুর কে আটক করে। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উক্ত দলনেতা মোঃ শাহজাহান এর গ্রুপে ০৮-১০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন উপজেলা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় দীর্ঘদিন হতে বিভিন্ন কৌশলে খাবারে বিষ প্রয়োগ করে মিশুক, অটোরিক্সা চালকদের অচেতন করে সর্বস্ব চুরি করে নিয়ে যায়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আন্তঃজেলা অজ্ঞান পার্টির সকল সদস্যদের গ্রেফতার ও চোরাইমালামাল উদ্ধার করার জন্য লাকসাম থানা পুলিশ গত ২১/০৫/২০২৩ইং তারিখ রাত্র ০০.১৫ ঘটিকা হতে সকাল ১০.০০ ঘটিকা পর্যন্ত কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানাধীন মাধাইয়া, মুরাদনগর থানার নলুয়া চৌমুহনী সহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আন্তঃজেলা অজ্ঞানপার্টি চক্রের সদস্য ২। মিজানুর রহমান (৩১), পিতা- আলী আহম্মদ, মাতা- মনোয়ারা বেগম, সাং- পনসাহী (হাজী বাড়ী), পোঃ রহিমা নগর, থানা- কচুয়া, জেলা- চাঁদপুর, ৩। নুর ইসলাম (২৪), পিতা- মোঃ হারুন অর রশিদ, সাং- নাওতলা, ০৫নং ওয়ার্ড, মাধাইয়া (কুরবান গাজী বাড়ী), থানা- চান্দিনা, জেলা- কুমিল্লা, ৪। মোঃ মিজান (২৩), পিতা- মৃত মোঃ নেজাম, মাতা- ফাতেমা বেগম, বর্তমান ঠিকানা সাং- ইয়াছিন মার্কেট, টমচম ব্রীজ, থানা- সদর দক্ষিণ, জেলা- কুমিল্লা, স্থায়ী ঠিকানা- ডিসি রোড মিয়ার বাবার মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানের পাশে বাড়ী, থানা- বাকলিয়া, জেলা- চট্টগ্রাম, ৫। মোঃ হানিফ (৩২), পিতা- মোঃ সুরুজ মিয়া, মাতা- রংমালা, সাং- নহল (কফিল উদ্দিনের বাড়ী), থানা- মুরাদনগর, জেলা- কুমিল্লা, ৬। শিপন মিয়া (২৩), পিতা- মৃত ইসমাইল মিয়া সাং- বড়ইয়াকুরি, জাহাপুর ইউপি, থানা- মুরাদনগর, জেলা- কুমিল্লা বর্তমান ঠিকানা- মাধাইয়া বাজার, ০৫নং ওয়ার্ড, থানা- চান্দিনা, জেলা- কুমিল্লা, ৭। মোঃ সুমন আহমেদ (২৫), পিতা- মোঃ দুলাল মিয়া, মাতা- পারুল মিয়া, সাং- নাওতলা, ০৫নং ওয়ার্ড, মাধাইয়া, থানা- চান্দিনা, জেলা- কুমিল্লাদের আটক করে। তাদের দেয়া তথ্য মতে সূত্রোক্ত মামলার ঘটনায় চোরাই যাওয়া মিশুক গাড়ী সহ মোবাইল উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলা হতে ইতিপূর্বে একই কায়দায়/প্রক্রিয়ায় চোরাইকৃত আরো ০২টি মিশুক গাড়ী উদ্ধার হয়। জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত আসামীরা সূত্রোক্ত মামলার ঘটনা সংঘঠনের কৌশল, খাবারে বিষ/ক্ষতিকারক ঔষুধ মেশানোর প্রক্রিয়া, সংগ্রহ, ভিকটিম সনাক্ত করণে তাদের অভিনব কৌশল(বোরকা পরিহিত অবস্থায় গর্ভধারন, অসুস্থতার ভান করা, কোম্পানির বস-কর্মচারীর পরিচয় দেয়া) ইত্যাদি সহ বাস্তবায়নের ঘটনা প্রবাহ বর্ণনা করে। তাছাড়া চোরাইকৃত মিশুক/অটোরিক্সা রং ও বডি দ্রুত পরিবর্তন করে অন্যত্র হস্তান্তর করার কথা প্রকাশ করে। এ সংক্রান্তে লাকসাম থানার মামলা নং-১২, তারিখ- ২১/০৫/২০২৩ইং, ধারা- ৩২৮/৩৭৯ পেনাল কোড রুজু করা হয়। মামলা তদন্ত অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃতদের মাঝে মোঃ শাহজাহান (২৬) এর বিরুদ্ধে সিএমপির বাকলিয়া থানায় একটি মাদক মামলা এবং শিপন মিয়া( ২৩) এর বিরুদ্ধে ডিএমপির বাড্ডা থানায় একটি মাদক মামলা রয়েছে।