প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার গ্রিন-হাউজ গ্যাস নির্গমন বন্ধ করার লক্ষ্যে প্যারিস চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা পরিবেশ আদালত আইন- ২০১০, বিপদজনক জাহাজ ভাঙার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা- ২০১১ এবং ২০১৪ সালে একটি সংশোধিত ও পরিমার্জিত ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করেছি। জাতীয় পরিবেশ নীতি- ২০১৮, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন- ২০১৯ এবং বিশুদ্ধ বায়ু আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা দেশে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। সম্প্রতি ঢাকায় গ্লোবাল সেন্টার অন এডাপ্টটেসান (জিসিএ)-এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস চালু করেছি।
প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ‘বিশ্ব ওজোন দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব ওজোন দিবস-২০২২’ পালন এবং মন্ট্রিল প্রটোকল গৃহীত হওয়ার ৩৫ বছর পূর্তি উদযাপন করা হচ্ছে জেনে আনন্দিত। এ উপলক্ষে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ওজোন স্তর সূর্য থেকে নি:সরিত অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবে মানবদেহে চর্ম-ক্যান্সার, চোখের ছানিসহ অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ, শস্য ও বাস্তুসংস্থানকে বিবিধ বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে সুরক্ষা দেয়। ওজোন স্তর সুরক্ষার জন্য ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় ১৯৮৭ সালে মন্ট্রিল প্রটোকল গৃহীত হয়। ফলে বিগত ৩৫ বছরে পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষয়িষ্ণু ওজোন স্তর ধীরে ধীরে পূনর্গঠন হতে শুরু করেছে এবং সূর্যালোক মানুষসহ পৃথিবীর সকল জীবের জন্য নিরাপদ হচ্ছে।
এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বিশ্ব ওজোন দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘পঁয়ত্রিশে মন্ট্রিল প্রটোকল জীবন রক্ষায় অঙ্গীকার অবিচল’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিলেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির পর তিনি অন্যান্য গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশব্যাপী বনায়ন ও উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা মন্ট্রিল প্রটোকল যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। ১৯৯৭ সালে বায়ু দূষণ ও ওজোন স্তর ক্ষতিকারক গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার রোধে বায়ুর মানমাত্রা নির্ধারণ করে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন শুরু করেছিলাম।
তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনদফা সরকার গঠনের ফলে আমরা ওজোন স্তর পুনর্গঠনে নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা ইতোমধ্যে দেশে এইচসিএফসি, হ্যালন, মিথাইলক্লোরোফরম, মিথাইল ব্রোমাইড ইত্যাদি ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছি। ২০০৯ সালে আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি এবং ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর জিডিপি’র ১ শতাংশ বা ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতুল্য অর্থ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে অভিযোজনের উদ্দেশ্যে ব্যয় করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০২০ সালের ৮ জুন মন্ট্রিল প্রটোকলের কিগালি সংশোধনীতে অনুস্বাক্ষর করে ব্যবহার হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মন্ট্রিল প্রটোকল সফলভাবে বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ও ওজোন সচিবালয় ২০১২, ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশকে প্রশংসামূলক সনদপত্র প্রদান করেছে, যা অমাদের সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন এবং অনুপ্রেরণা। তাছাড়া, ওজোন স্তর ক্ষয়কারী হিসেবে চিহ্নিত দ্রব্য এইচসিএফসি-এর ব্যবহার ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে ৬৭.৫০ শতাংশ হ্রাসে এইচপিএমপি স্টেজ-২ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, এবারের বিশ্ব ওজোন দিবস উদযাপন মট্রিল প্রটোকল বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি ওজোন স্তর রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এবং শিল্পক্ষেত্রে টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তির ব্যবহার উৎসাহিত করবে। তিনি বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর সুরক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
‘বিশ্ব ওজোন দিবস ২০২২’ পালন ও মন্ট্রিল প্রটোকলের ৩৫ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন তিনি।