রাস্তায় চলাচলের জন্য রিকশার পরিবর্তে নৌকার উপর ভরসা করছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা লালপুর ও পৌষার পুকুরপাড়সহ তার আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। এসব এলাকার ব্যস্ততম সড়ক বৃষ্টির পানিতে পানিবদ্ধ হয়ে পড়েছে সাধারন মানুষ। মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যেতে হলে নৌকা দিয়ে পার হতে হচ্ছে। রাস্তায় জমে আছে কোমর পানি। নৌকা ছাড়া চলাফেরা করার কোন বিকল্প নেই। নৌকায় উঠলেই দিতে হচ্ছে ২০ টাকা। এক মিনিটের পথ রিকশা চালকদের তিন গুণ ভাড়া দিতে চাইলেও যেতে রাজি নয়। এমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। স্থানীয়রা অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন এই ভোগান্তির সাথে। গতকাল ফতুল্লার লালপুর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে পানিবদ্ধ এমন দৃশ্য দেখা যায়।
ডিএনডি প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর মানুষ ভেবেছিল টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলেও পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হবে না। কিন্তু একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাস্তা থেকে শুরু করে মানুষের ঘরে এখন পানি জমে রয়েছে। মনে হচ্ছে এই এলাকায় বন্যা হয়েছে। টিনের ঘর থেকে শুরু করে ৫তলা ভবনের মালিকরা পানিবদ্ধতায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। যাদের প্রাইভেট গাড়ি রয়েছে তারা বাড়িতে না রেখে অন্য স্থানে রাখছেন। বাড়ি থেকে বের হয়ে নৌকায় চড়ে শুকনো স্থানে গিয়ে গাড়িতে উঠে তারা তাদের কর্মস্থলে যাচ্ছেন। আর গরীব মানুষের নৌকা ভাড়া দিতে কষ্ট হবে বিধায় কোমর পানি ভেঙে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে।
এদিকে ফতুল্লার লালপুরে সরকারি দলের তিনজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বাড়ি। তারা ওই এলাকায় বসবাস করেন। তারাও বাধ্য হয়ে নৌকা দিয়ে পার হচ্ছেন। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) লুৎফর রহমান স্বপন পানিবদ্ধতা দূর করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ লালপুর ও পৌষার পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দাদের।
ফতুল্লা বাজারের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও পৌষাপুকুরের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন মোল্লা জানান, ফতুল্লা চৌধুরী বাড়ির জাতীয় পার্টি নেতা কাজী দেলোয়ার হোসেনের বাড়ির সামনে থেকে নৌকায় চড়তে হয়। তার বাসা পর্যন্ত নৌকা ভাড়া ২০ টাকা। পাঁচ মিনিটের রাস্তা যেতে লাগে মিনিমাম ২০-২৫ মিনিট। কখনো আবার নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হলেও জনপ্রতিনিধিরা সমাধানের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা জুয়েল জানান, বর্ষাকাল মানেই তাদের জন্য পানিবন্দি হওয়া। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তা ঘাট ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়ি ঘরেও পানি প্রবেশ করে। ঘর থেকে বের হয়ে বাজারে যেতে হলে নৌকা ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই। তারপরও সব জায়গায় নৌকা চলাচল করে না। মানুষ কাপড় ভিজিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন।
লালপুরের বাসিন্দা বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী জানান, পানিবদ্ধতার কথা বলার কিছু নাই। আমারও বাসা হতে বের হলে নৌকায় চড়ে হতে হচ্ছে। এ রাস্তায় কোন রিকশা চলাচল করতে পারছে না। মটর দিয়েও পানি অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডিএনডি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগে এ দুর্ভোগ অবসানের সম্ভাবনা দেখছি না।
উল্লেখ্য, ফতুল্লার লালপুর, পৌষার পুকুরপাড়, আলআমিন নগর, উত্তর ইসদাইর এলাকায় সৃষ্ট পানিবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে বসানো হয়েছে শক্তিশালী ৩টি মোটর। কিন্তু প্রায়ই এই মোটর বন্ধ রাখার অভিযোগ স্থানীয়দের। যদিও তা অস্বীকার করেছেন মোটর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। তাদের দাবি দৈনিক ১৮ ঘণ্টা মোটর চালিয়েও পানি পুরোপুরি অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তার উপর দীর্ঘ সময় চালিয়ে রাখার ফলে ত্রুটি দেখা দেয় মোটরে। এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটবে তা অজানাই থেকে যাচ্ছে সকলের কাছে।